বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় আনতে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেন থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তারা তাদের প্রভুদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সমস্ত আইন তৈরি করছে।
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়াটি এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার থেকে শুরু হয়েছে। বিরাজনীতিকরণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো তখন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোকে একেবারে অকার্যকর করে। এখনো পরিকল্পিতভাবে সচেতনভাবে সেই কাজ চলছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনগুলো একইভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য দায়িত্ব পালন করেছে। সংবিধান থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ঠিকভাবে করতে না পারলে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া সম্ভব নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সরকারকে বিদায় করতে হবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসপাতালের মালিকের সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা। সরকারের মদদে রিজেন্টের মালিক এসব অপকর্ম করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সকালে উঠে শুনতে হয় মৃত্যুর খবর আবার রাতে শোয়ার আগেও শুনতে হয় মৃত্যুর খবর। এভাবে মহামারিতে কোনো রকমের প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না এবং চরম উদাসীনতার মধ্য দিয়ে, অবহেলার মধ্য দিয়ে সরকার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে-এটা কখনো গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে চাই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নাই, সেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, জনগণের অধিকারকে রক্ষা রার জন্য। তাদের আজকে একটা জায়গায় আসতে হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ করে আনার জন্যে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ কালীন সরকার এবং এই সরকারকে চলে যেতে হবে-এই দাবি তুলতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন বড় সমস্যা হচ্ছে- এক কোটি থেকে আরো বেশি লোক বেশি দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। প্রতিদিন দৃশ্যমাণ ন্যূনতম ১০/২০ পরিবার ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। এদের রক্ষা করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তারা শুধু মিথ্যাচারই করতে পারে। একসময়ে বলতো- আকাশে উড়লে ঢাকাকে লস এনজেলসের মতো শহর মনে হয়। কতগুলো ’উম্মাদ ফরটোয়ন্টি’ মন্ত্রী হয়েছেন এবং তারা একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছেন। এখন দেখা যাচ্ছে- সরকারের কাছে কোনো টাকাই নেই। দেশ কত বড় সমস্যায় পড়লে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভে হাত দিতে চায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ডকট্রিন অব নেসেসিটির কথা বলে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার দুই বছর ছিল। এখন কেনো করা যাবে না। এখন ভোট হলে যারা ভোট দিতে যাবে তাদের করোনা সংক্রমণ হতে পারে। সরকার বলছে জনগনকে ঘরে থাকতে আর নির্বাচন কমিশন জনগনকে ঘরের বাইরে আনতে চাইছে।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ এন্ড কমিউনিকেশনের উদ্যোগে ’রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন: করোনাভাইরাস বিপর্য়য়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আবারো সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি কমিউনিকেশন সেলের পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় বক্তব্য দেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব আব্দুর রশীদ প্রমুখ।