প্রশাসনিক ও একাডেমিক জবাবদিহিমূলক কার্যক্রম স্বচ্ছতার সূচকে রেকর্ড গড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত টিমের আর্থিক রিপোর্টে ভূয়সী প্রশংসা ও সামগ্রিক রির্পোটের ভিত্তিতে আমূল পরিবর্তন হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রশংসায় ভাসছে। ২০ আগস্ট মেয়াদপূর্ণ হতে যাওয়া প্রশাসনকে একাডেমিক ও প্রশাসনিকসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্প ৭৫৩ কোটি টাকার কাজের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে আছে নানা গুঞ্জন। অব্যাহত স্বচ্ছতার সূচকে আর্থিক অনিয়ম মোকাবেলা প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্তকতাবৃন্দ।
জানা যায়, ভাবমূর্তি সঙ্কটে নিপতিত প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির আতুড়ঘর খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রগতিশীল ভাবধারা অসাম্প্রদায়িকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গত ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় বর্তমান প্রশাসন। প্রশাসনিক দক্ষতায় এক ঘন্টার জন্য অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়নি। এরই মধ্যে দেশপ্রেম ও অসম্প্রাদিয়ক চেতনায় উদ্ভুদ্ধকরণে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠাকরণ, প্রধান ফটকে অনিন্দ্য সুন্দর মূর্যাল মৃতঞ্জয়ী মুজিব, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও একুশে কর্নার, বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে শ্বাসত মুজিব ও মুক্তির আহ্বান ম্যূরাল স্থাপিত হয়।
একাডেমিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কর্মঘন্টা ৮ থেকে দুইটার পরিবর্তে ৮ থেকে ৪.৩০টা পর্যন্ত বর্ধিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক প্রথম (২০১৬-২০২১) পাঁচ বছর মেয়াদী মডেল অর্গানোগ্রাম অনুমোদন, সুষ্ঠু তদারকিতে সকল বিভাগকে সেশনজটমুক্তকরণ, পাঁচটি অনুষদকে ৮টিতে বর্ধিতকরণ, ২৫টি বিভাগ হতে ৩৪টিতে উন্নীতকরণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, এমফিল পিএইচডি নীতিমালা আপগ্রেডেশন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী অটোমেশন, রেজাল্ট প্রোসেসিং সফটওয়ার সংযুক্ত, কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরী ও ইনোভেশন ল্যাব স্থাপন করা হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এমওইউ করা হয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনার পূর্বের চেয়ে আভ্যন্তরিন আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিনগুণ বাজেট ঘাটতি কমিয়ে এসেছে কুঁড়িগুন। এছাড়া বিগত সময়ের ১৯টি অডিট আপত্তি নিস্পত্তি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। বিগত দুই অর্থ বছরে কোন অডিট আপত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৩৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। মেগাপ্রকল্পের আওতায় ৫৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া বিশ^বিদ্যালয়টি ১৮টি ভবনের ভার্টিকেল বর্ধিতকরণ হয়েছে।
অবকাঠামোগত অধিক স্বচ্ছতার জন্য ইলেকট্রনিক টেন্ডারিং পদ্ধতি চালু হয়। স্বচ্ছ এই প্রক্রিয়ায় ১৮টি ভবনের ভার্টিকেল বর্ধিতকরন নির্মানকাজ চলছে, এছাড়া ৯টি দশ তলা ভবনের ডিজাইন শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামরায় আওয়াতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অবস্থানগত কারনে পরিবহন সমস্যা দূর করণে ৩২আসণের ৮টি এসি গাড়ী, ৫২ সিটের ২টি বাস ও ১টি অ্যাম্বুলেন্স পরিবহন পুলে যুক্ত হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামোর পর্যাপ্ততাসহ সকল স্তরের ৮০% আবাসন নিশ্চিত হবে। করোনাকালের সংকটময় মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্ধারিত ছুটি থাকায় সার্বিক এই অব্যাহত গতি যেন থমকে না যায় সেজন্য অনলাইনভিত্তিক ক্লাস গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উধ্বর্তন শিক্ষক ও কর্তাব্যক্তিদের সাথে দফায় দফায় ভার্চুয়াল সভা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের ৫৩৭ কোটি ৭ লক্ষ বরাদ্দকৃত টাকার স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে প্রশাসন কে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও উধ্বর্তন কর্তা ব্যক্তিদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেল প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশী প্রতিষ্ঠিত।