বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৭ অপরাহ্ন

করোনায় কাবু মধ্যবিত্ত

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০
  • ৪৭ জন নিউজটি পড়েছেন

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনার প্রভাবে কাবু হয়ে পড়েছে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এক দিকে আয়-রোজগারের পথ সঙ্কুচিত অন্য দিকে বাড়ছে নানামুখী ব্যয় এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে শহর-নগরে বসবাসকারী মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় রীতিমতো হাহাকার চলছে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন। যাদের চাকরি আছে তারাও ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। যারা বেতন পাচ্ছেন তারাও পুরো বেতন পাচ্ছেন না। আর যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে সংসার চালান তাদেরও আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। অথচ বাসা ভাড়াসহ দৈনন্দিন সব খরচই দিনদিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে হতাশা আর নিরাপত্তাহীনতা। জীবনের শেষ পুঁজিটুকু ভেঙে খাচ্ছে অধিকাংশ পরিবার।

বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা মানুষের স্বাভাবিক জীবনচক্রকে ওলটপালট করে দিয়েছে। অদৃশ্য এ অণুজীবের সংক্রমণে শরীরের মতো জনজীবনও বিপর্যস্ত। সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়ায় অনেকের জীবনে এখন দুর্দিন চলছে। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত তাদের সময় কাটছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই বেশির ভাগ মানুষ বর্তমানে গৃহবন্দী থাকায় দিশেহারাই শুধু নয়, কর্মহীনতার চরম সঙ্কটেও আবর্তিত। এতে মধ্যবিত্ত আর নিম্নশ্রেণীর মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। রুজি রোজগারে আসছে এক অশনি সঙ্কেত। অনেকে অভাবে থেকেও মুখ ফুটে কারো কাছে বলতে পারছেন না। লজ্জায় হাত পাততে না পেরে তারা পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কবে এই দুঃসময় অতিক্রম করা যাবে তেমন আশ্বাসও কেউ দিতে পারছে না।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা গেছে, করোনার প্রভাবে দেশে নিম্নবিত্তের আয় ৭৫ ভাগ কমেছে। আগের তুলনায় চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে ৬০ ভাগ। জরিপ অনুযায়ী, তাদের ৭২ শতাংশের কাজ কমে গেছে, নয়তো তারা আয়ের সুযোগ হারিয়েছেন। আট ভাগের কাজ থাকলেও মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই। ২৯ ভাগের ঘরে আছে এক থেকে তিন দিনের খাবার। সরকারের জরুরি ত্রাণ পৌঁছেছে মাত্র চার শতাংশ মানুষের কাছে। ৬৪ জেলার দুই হাজার ৬৭৫ জনের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ ভাগই চরম বা হতদরিদ্রের স্তরে নেমে গেছেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার, প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা দিয়ে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এসব খুবই কম। তা ছাড়া সব পক্ষের লোকেরা এ সহায়তা পাচ্ছেন না। কিছু বিত্তবান মানুষ সীমিত আকারে নিজ উদ্যোগে ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনা করলেও তাতে প্রয়োজনের খুব সামান্য অংশই পূরণ হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, যারা এতদিন স্বল্প আয় দিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতেন তারা পড়েছেন বেশি বেকায়দায়। অসহায় হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন গ্রাম-গঞ্জ থেকে লেখাপড়ার জন্য শহরে আসা তরুণ-যুবকরাও। সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা কার্যক্রম তাদের পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাকরি হারানো বা আয় কমে যাওয়া অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার এখন বাড়িওয়ালারও কঠোর রোষাণলে পড়ছেন। বিভিন্ন এলাকায় সময়মতো বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় মালিকদের দুর্ব্যবহারই শুধু নয়, ঘর থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বাধ্য হয়ে অনেকে আসবাবপত্র ফেলে রাতের অন্ধকারে বাসা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। আসবাবপত্র রেখে দিয়ে অনেককে বের করে দেয়া হচ্ছে জোর করে। ফলে করোনার এই চরম দুর্যোগে অসহায় মানুষগুলোর সর্বস্ব হারানোর ব্যথাও কম নয়। তার ওপর আত্মীয়স্বজনের বাসায় আশ্রয় মিলছে না। মানুষের বাধায় যেতে পারছেন না গ্রামেও। এমন এক পরিস্থিতিতে তারা আজ দিশেহারা।

অন্য দিকে বাড়ি ভাড়ার ওপর নির্ভরশীল কিছু বোধসম্পন্ন পরিবার পড়েছে ভিন্নধরনের সমস্যায়। করোনাকাল বিবেচনায় কঠোর হতে না পেরে নিম্নআয়ের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া তুলতে পারছেন না। মানবিক বিবেচনায় তাদের বের করেও দিতে পারছেন না। আবার দৈনন্দিন ব্যয় তাকে ঠিকই নির্বাহ করতে হচ্ছে। পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের বিল বকেয়া বাড়ছে। নিজের পাশাপাশি ভাড়াটিয়াদের ইউটিলিটিও চালু রাখতে হচ্ছে। ব্যাংক কিস্তির বকেয়া এবং দায়দেনার পরিমাণ বাড়ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, কবে নাগাদ করোনার এই মহামারী থেকে মুক্তি মিলবে তাও অনুমান করতে পারছেন না কেউই। শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতিতে কোনোমতে জীবন পার করে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে আরেক কষ্টে সময় পার করছেন শিক্ষিত বেকার যুবকরা। শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি না পেয়ে টিউশনি বা পার্টটাইম চাকরি করে আগে কোনোমতে চললেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ১৫ লাখ বেকার যুবক দেশের এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য নেই কোনো ত্রাণ বরাদ্দ। আবার কারো কাছে হাত পাততেও পারছেন না তারা। তাই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছেন অনেক শিক্ষিত বেকার। শিক্ষাজীবন শেষ করে অনেক কষ্ট করেও সরকারি চাকরির সুযোগ পাননি। অনেকে সেশনজটের কবলে জীবনের মূল্যবান চার থেকে পাঁচ বছর হারিয়েছেন। এ কারণে সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। তাই টিউশনি করে বা কেউ পার্টটাইম চাকরি করে কষ্টে দিন পার করতেন। বর্তমানে করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের অনেককেই।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English