শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন

করোনা-পরবর্তী বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০
  • ৫১ জন নিউজটি পড়েছেন

করোনার প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বে কমে গেছে বিদেশি বিনিয়োগ। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য বিদ্যমান আইনকানুন আরও সহজ ও গতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিদেশিরা যাতে এ দেশে নতুন বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসার পর তারা যাতে কোনো ধরনের জটিলতায় না পড়ে, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। মূলত, করোনা-পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতির নতুন মেরুকরণ ও বিদেশি বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কভিড-১৯ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি লেখা হয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং প্রক্রিয়া আরও সহজ ও গতিশীল করার কথা উল্লেখ করা হয়।

এদিকে দেশীয় উদ্যোক্তা বলেছেন, করোনা-পরবর্তী চীনসহ অনেক দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য বিদ্যমান আইনকানুন আরও সহজ, ব্যাংক খাতের সংস্কার, বিদেশি ঋণপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত, করনীতি সহজ, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শক্তিশালী, বিনিয়োগ আইন শক্তিশালী করাসহ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত আঙ্কটার্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৫৬ শতাংশ। জানা গেছে, কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ অন্য দেশে স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের অনেক দেশ যেমন ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া তাদের নিজ দেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইনকানুন, বিবিবিধান ও ব্যাংক প্রক্রিয়া সহজ করেছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে নীতি কাঠামোতে। সূত্র বলেছে, চীনের অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশেও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইনকানুন সহজ ও যেখানে যেখানে প্রতিবন্ধকতা আছে, তা চিহ্নিত করে দূরীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, কভিড-১৯-পরবর্তী চীন সে দেশের বিনিয়োগ নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ চার-পাঁচটি দেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরিত করতে আগ্রহী। বিশেষ করে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরবরাহ বা সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায় চীন। বাংলাদেশকে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা সংস্কারসহ নীতি সহায়তার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের বিনিয়োগ আইনটি এখনও দুর্বল। এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনে কোনো সমস্যা নয়। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন দেশ থেকে চলে যেতে চায়, কিংবা অন্য দেশে নতুন করে বিনিয়োগ করতে চায় তখন নানা ধরনের জটিলতার শিকার হতে হয়। এসব প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিজ দেশে সহজে লভ্যাংশ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির অন্যতম পূর্বশর্ত। তারা যাতে অনায়সে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে অর্থ জমা, উত্তোলন ও তাদের বিনিয়োগের লভ্যাংশ বা অর্থ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন (নিয়ে যেতে পারে) করতে পারেন, সে জন্য ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুততর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আমানতের সুদ হার বিদেশি ব্যাংকের তুলনায় অধিক হওয়ায় দেশীয় ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সঞ্চয়স্কিমে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন। কিন্তু সঞ্চয়স্কিমের মেয়াদ শেষে অর্থ উত্তোলন এবং প্রবাসে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় জটিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা অনেক প্রবাসীকে দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে- উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান আইনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নিতে হয় না। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসনের কোনো লিমিট বা সীমা নেই। প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন আর্নিংয়ে যে পরিমাণ অর্থ জমা থাকে তার পুরোটাই নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ নেই। শুধু অডিট করতে হয় এবং এজিএমে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ ছাড়া যেদিন প্রত্যাবাসন করা হয় সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান আইনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনের বিদ্যমান নিয়ম খুবই উদার। আইনে কোনো পরিমাণের কথা উল্লেখ নেই। প্রত্যাবাসনের জন্য কারও অনুমতি নিতে হয় না। ফলে এ বিষয়ে যে অভিযোগ রয়েছে তা সত্য নয় বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭-কে বাংলা ভাষায় রূপান্তর ও যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়া আইনের ওপর সংশ্নিষ্ট অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আইনে কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে বিষয়ে এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বেজা, বেপজা, বিডা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীসহ সকলের মতামত নিয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। এরপর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। ওখানে অনুমোদনের পর সংসদে উপস্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে কভিড-১৯ পরবর্তী এফডিআই প্রবাহের ক্ষেত্রে দেশে সম্ভাবনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগানো যাবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English