অনিশ্চিত সময়ের জন্য আটকে গেছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম। চলতি মাসে অনলাইনে আবেদন নেয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, সেটি নিশ্চিত নয়।
এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার তিন সপ্তাহ আগে এই শ্রেণির ভর্তি আবেদন কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যস্ত রাখতে উচ্চ মাধ্যমিকের বই বাজারে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
সরকারের তত্ত্বাবধানে বাংলা, ইংরেজি ও বাংলা সহপাঠ বই এখন থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পাওয়া যাবে। করোনা পরিস্থিতি উত্তরণের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বইটি বাজারে পাওয়া যাবে। এ বইটি এবার প্রথমবারের মতো সরকার প্রকাশ করছে।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক যুগান্তরকে বলেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঠিক কবে নাগাদ চালু করা যাবে, তা কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। তাই একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম এখনই উম্মুক্ত করা যাচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ২০-২২ দিন আগে আমরা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার আশা রাখছি।
অন্যদিকে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রতিবছর একাদশ শ্রেণির বই বাজারজাতের নতুন কার্যাদেশ দিই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার এখনও এ প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। অথচ এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে আছে। অন্যদিকে মার্চ থেকে কলেজ বন্ধ থাকায় পুরনো একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনেকে বই কিনতে পারেনি। অভিভাবকদের অনেকে নানা কাজে বাইরে বের হচ্ছেন।
তারা হয়তো চাইলে সন্তানের জন্য বই কিনতে পারবেন। এজন্য বাজারে বইয়ের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত বছর মুদ্রণের কার্যাদেশ দেয়া তিনটি বই (বাংলা, ইংরেজি, সহপাঠ) আরও চার মাসের জন্য বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়েছে। কেবল আইসিটি বইটি আমরা নতুনভাবে প্রণয়ন করছি।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের নেতৃত্বে বইটি রচিত হয়েছে। জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিকের কোনো বইয়ে এবার কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন আসছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষার্থীদের বই বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে তাগিদ আসছিল। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম আধুনিকায়নের কাজ বেশিদূর আগানো যায়নি।
ফলে নতুন কারিকুলাম প্রবর্তন এক বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আগের বছরের কারিকুলাম ও বই-ই নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য বহাল রাখা হয়েছে। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা জানান, গতবছর অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসকে উচ্চমাধ্যমিকের বই মুদ্রণ ও বাজারজাতের কাজ দেয়া হয়েছিল। আরও চার মাস এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে থাকা বইগুলো বাজারজাতের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে এই প্রতিষ্ঠানকে (এনসিটিবি থেকে নেয়া) সিকিউরিটি পেপার ব্যবহার করে তা মুদ্রণ করতে হবে। তিনি আরও জানান, উচ্চমাধ্যমিকের বই প্রচুর নকল হয়।
এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। তাই সিকিউরিটি পেপার ছাড়া বই মুদ্রণ এবং না কেনার জন্য তারা পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী কাওসারুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, তাদের মুদ্রিত ৯ লাখ বই এখনও অবিক্রীত আছে। সরকারি বই সিকিউরিটি পেপার ছাড়া মুদ্রণ ও বাজারজাত করা কিংবা তথ্য বিকৃতিসহ নকল করে বিক্রি ও সংরক্ষণ দণ্ডণীয় অপরাধ। সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করার কোনো চিন্তা তাদের নেই।
এদিকে অন্য বছর ৫০ দিনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও এবার তা ২০-২২ দিনে সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন, অন্য বছর সাধারণত পুনঃনিরীক্ষার ফলের জন্য ৩০ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এবার ইতোমধ্যে সেই ফল দেয়া হয়েছে। ভর্তি সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন শুধু পরিস্থিতি স্বাভাবিকের অপেক্ষায় আছি।
জানা গেছে, জিম্মি করে শিক্ষার্থী ভর্তি ঠেকাতে এবার কেবল অনলাইনে নেয়া হবে আবেদন। অনলাইনে ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করা যাবে। এর জন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস করে ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে না।
মুক্তিযোদ্ধা বাদে ভর্তিতে থাকবে না আর কোনো কোটা। ৯৫ শতাংশ আসন পূরণ করা হবে মেধায়। প্রবাসীর সন্তান এবং প্রতিবন্ধীরা ভর্তি হতে পারবে। তবে কোটায় নয়, শিক্ষা বোর্ডের সুপারিশে বিশেষ বিবেচনায়। এবার রেজিস্ট্রেশন ফি বেড়েছে ৫ টাকা। এবার ১৩৫ টাকা ফি দিতে হবে।