‘বলুন, আমাদের জন্য আল্লøাহ যা লিখেছেন তা ছাড়া আমাদের জন্য কিছু ঘটবে না। তিনি আমাদের অভিভাবক আর আল্লøাহর ওপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত।’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৫১)
এই কথাগুলো যদি আমরা অনুভব করতে পারি, তাহলে আমাদের না পাওয়া, চাওয়াগুলো নিয়ে আর কোনো কষ্ট থাকার কথা নয়। এ কথাগুলো মনে এমন প্রশান্তি আনে যে, সব না পাওয়ার কষ্ট নিমিষেই দূর করে দেয়।
কৃতজ্ঞতাবোধ সবরকম মানবীয় গুণাবলির মধ্যে অন্যতম একটি গুণ। যা সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। কৃতজ্ঞ ব্যক্তি অনেক বেশি ধীরস্থির ও প্রশান্ত থাকে যেকোনো অবস্থাতেই। তাই কৃতজ্ঞ ব্যক্তির শরীর-মন সবই থাকে সজীব, সতেজ এবং সুস্থ। রাসূলুল্লøাহ সা: বলেন, ‘কোনো বান্দা প্রকৃত ঈমানের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ না এটা জানবে যে, তার সাথে যা ঘটেছে তা কখনো তাকে ছেড়ে যেত না। আর যা গেছে তা কখনো তার জন্য ঘটত না।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬/৪৪১-৪৪২)
মুসলিমদের জন্য যেখানে কৃতজ্ঞ থাকাটা সরাসরি ঈমান ও মুমিন হওয়ার সাথে সম্পর্কিত, সেখানে না পাওয়া নিয়ে আমাদের মানসিক প্রশান্তি নষ্ট করার কোনো কারণ আছে কি? তাকদিরে বিশ্বাস ঈমানের পূর্বশর্ত। রাসূলুল্লøাহ সা: বলেন, ‘মুমিনের বিষয়াদি কত আশ্চর্যের। তার সব কিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। যখন তার সাথে ভালো কিছু ঘটে সে শুকরিয়া আদায় করে। তখন তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে তাহলে সে সবর করে। ফলে তাও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ২৯৯৯)
সুবহানাল্লøাহ! জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা আল্লøাহ তায়ালার কী পরিমাণ নিয়ামত ভোগ করি তা কল্পনাও করা যায় না। প্রতি সেকেন্ডে আমরা যে অক্সিজেন পাচ্ছি, তার মূল্য কোনো মানুষের পক্ষে শোধ করা সম্ভব? আপনি সুস্থ আছেন এর চেয়ে বড় নিয়ামত আর কী হতে পারে? আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই অধিক দান করব। আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সূরা ইবরাহিম : ৭)
কুরআন ও হাদিসে কৃতজ্ঞ হওয়ার যে সুফল আমরা দেখি তা বিজ্ঞান দিয়েও স্বীকৃত। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন আমরা কৃতজ্ঞ হই, তখন আমাদের ব্রেইন ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে। এ দুটো জিনিসই ব্রেইনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে আমাদের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ডোপামিন আমাদের যেকোনো ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এ নিঃসরণ যদি কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য হয়, তাহলে এটি আপনাকে আরো উৎসাহিত করবে একই কাজ আবার করতে। কৃতজ্ঞতাবোধের অনুভূতির সময় তাই আমরা হৃদয় থেকে ভালো অনুভব করি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ রিসার্চের গবেষকরা কৃতজ্ঞতাবোধের অনুভূতির সময় ব্রেইনের বিভিন্ন অংশে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেছেন যে, এ অনুভূতি সময় হাইপোথ্যালামাসের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়। হাইপোথ্যালামাস দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, যেমনÑ খাওয়া, ঘুম ইত্যাদি।
এ ছাড়া কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের স্ট্রেস লেভেল এবং মেটাবলিজমকেও প্রভাবিত করে। এর প্রভাবে মানসিক অবসাদগ্রস্ততাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর হয়। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, কৃতজ্ঞ হলে মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। যা বিভিন্ন ট্রমা থেকেও বের হতে সাহায্য করে, ঈর্ষাপরায়ণ মনোভাব কমায়, এতে একই সাথে অন্যের সাথে তুলনা করার প্রবণতাও কমে। এ ইতিবাচক মনোভাব ভালো ঘুমের জন্যও বেশ কার্যকর। এ বোধ সহনশীলতা বাড়ায় এবং প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব কমায়। হতাশা, অবসাদসহ যাবতীয় সব নেতিবাচক আবেগকেও উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়। এতে করে মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়। একজন মুসলিম হিসেবে মুমিন হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। মুমিনের লক্ষ্য হচ্ছে জান্নাত, দুনিয়া নয়। আমরা যা কিছু চাই তার সবই কেবল জান্নাতেই পাওয়া সম্ভব। আল্লøাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের রব তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর দয়া ও সন্তোষের এবং এমন জান্নাতের। যেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী নেয়ামত।’ (সূরা আত তাওবাহ : ২১)