নায়ক আলমগীর, আদ্যোপান্তই একজন সিনেমার মানুষ। সিনেমা’কে ভালোবেসেই দীর্ঘ ৪৮ বছর অর্থাৎ পরপর চারটি যুগ অতিক্রম করেছেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে কলেজ জীবনে নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে তার যাত্রা শুরু হলেও মূলত ১৯৭২ সালের ২৪ জুন তিনি প্রয়াত বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কুমকুমের নির্দেশনায় ‘আমার জন্মভূমি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি’তে ‘আমার জন্মভূমি’ মুক্তির আগেই আলমগীর সিরাজুল ইসলামের ‘দস্যুরানী’, আজিজুর রহমানের ‘অতিথি’, আলমগীর কুমকুমের ‘মমতা’, মোহর চাঁদের ‘হীরা’ সিনেমার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে একের পর এক সিনেমায় কাজ করে দীর্ঘ ৪৮ বছর অভিনয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করেন। এখন পর্যন্ত আলমগীর ২২৫টিরও বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। তার প্রযোজিত প্রথম সিনেমা ‘ঝুমকা’।
এক সময় রাজধানীর গ্রীন রোডে একটি স্কুলে সৈয়দ আব্দুল হাদীর কাছে দু’তিন মাস গানও শিখেছিলেন। মোস্তফা মেহমুদের ‘মনিহার’ সিনেমায় সত্য সাহার সুর সঙ্গীতে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায় প্রথম প্লে-ব্যাক করেন তিনি। কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘ মা ও ছেলে’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। পরবর্তীতে আরো আটবার একই পুরস্কারে ভূষিত হয়ে বাংলাদেশের সব নায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার রেকর্ড সৃষ্টি করেন তিনি। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নিষ্পাপ’ (১৯৮৬)। সর্বশেষ তিনি ‘একটি সিনেমার গল্প’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন।
২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত হন। বাচসাস’ পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি তিনবার। আন্তর্জাতিক সম্মাননা ‘উত্তম কুমার সম্মাননা’, ‘কালাকার অ্যাওয়ার্ড’,‘ বেঙ্গল ফিল্ম অ্যান্ড কমার্স এসোসিয়েসন অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছেন।
দীর্ঘ চার যুগের অভিনয় জীবনের পথচলা এবং নিজেকে একজন অভিনেতা হিসেবে মূল্যায়ণ করতে গিয়ে আলমগীর বলেন,‘ সত্যি বলতে অভিনয় সম্পর্কে মূল্যায়ণ করার মতো অভিনেতা আমি নই। অভিনয়ের ব্যাপ্তি এতো বিশাল যার শেষ দেখা এক জনমে সম্ভব নয়। অনেকেই আমাকে নানান বিশেষণে ভূষিত করেন। কিন্তু আমি সবসময়ই একজন অভিনেতা হবারই চেষ্টা করেছি। আমার আজকের অবস্থানের নেপথ্যে অবশ্যই আমার প্রথম সিনেমার পরিচালক যিনি আমাকে আবিষ্কার করেছেন শ্রদ্ধেয় আলমগীর কুমকুম ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে এমনভাবে নায়ক হতে শিখিয়েছেন যেন আমি আকাশে উড়ে না যাই, যে কারণে আমি এখনো মাটিতেই হাঁটি। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি গুনী শ্রদ্ধেয় পরিচালক মোস্তফা মেহমুদ, কামাল আহমেদ, সুভাষ দত্ত, খান আতাউর রহমান, চাষী নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, এজে মিন্টু, কাজী হায়াৎ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সাইফুল আজম কাশেম, মালেক আফসারী’সহ আরো অনেকেই। তারা আমাকে হাতে ধরে শিখেয়েছেন অভিনয়। আমার সৌভাগ্য যে এমন গুনী পরিচালকদের সাহচর্য্যে থেকে অভিনয় শেখার সুযোগ পেয়েছি।’ আলমগীরের পুরো নাম মহিউদ্দীন আহমেদ আলমগীর। তার বাবা আলহাজ্জ্ব কলিম উদ্দিন আহমেদ (দুদু মিয়া) ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমার একজন অন্যতম প্রযোজক ছিলেন।