বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

টান পড়েছে সঞ্চয়ে

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০
  • ৪১ জন নিউজটি পড়েছেন

বিনিয়োগ কমছে সঞ্চয়পত্রে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ গত এপ্রিলে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে উত্তোলন হয়েছে দ্বিগুণ। আলোচ্য সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬৬২ কোটি টাকার। একই সময়ে বিনিয়োগকারীদের মূল অর্থ তুলে নেওয়ার পরিমাণ ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। নিট বিক্রি কমেছে ৬২২ কোটি টাকা।

গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছিল। ওই বিক্রিতে লাগাম টানতে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে বেশ কিছু শর্ত ও বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। ফলে কিছুটা কমতির দিকেই ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। তবে গত মার্চ থেকে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর স্থবির হতে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এখনো গতিহারা অর্থনীতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে মানুষকে সঞ্চয় করার চাইতে বরং সঞ্চয় তুলে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। এর ফলে মে মাস থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চাইতে তুলে নেওয়ার পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এবং অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি না আসলে আগামী দিনে সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা তুলে নেওয়ার হার আরো বাড়বে।

অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বেশকিছু শর্ত আরোপের কারণে এমনিতেই কমে আসছিল। তবে এখন মানুষের হাতে টাকা কম। ফলে বিনিয়োগ আরো কমতে পারে। অবশ্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমলে সুদ বাবদ ব্যয়ে সরকারকে অপেক্ষাকৃত কম টাকা খরচ করতে হবে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র সরকারের জন্য ব্যয়বহুল ঋণ।

রাজধানীর রামপুরা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আমিনুর রহমান বলেন, অর্থের টান পড়ায় সম্প্রতি তিনি মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী মাসগুলোয় পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ খাতে বিনিয়োগের চেয়ে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ আরো বাড়বে।

গত বছর থেকে সব ধরনের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যবস্থা বাতিল করে অনলাইনে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়। এ সংক্রান্ত সব লেনদেন করতে হচ্ছে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। এছাড়া এ খাতে বিনিয়োগকারীর ট্যাক্স ফাইল নজরদারির মধ্যে আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়। যাতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীর আয়কর ফাইলে দেখানো বিনিয়োগের হিসাবের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগের পরিসংখ্যান যাচাই করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে যৌথ নামে কোনো কোম্পানি কর্মীর জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে তার একক নামে কোনো বিনিয়োগ রয়েছে কি না, তা ধরতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের (আরজেএসসি) কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। একইভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারেও প্রবেশাধিকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে একজন ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নিলেও বিক্রি কমতে থাকায় পরবর্তীকালে তা কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ধরা হয়। গত জুলাই থেকে এপ্রিল ১০ মাসে মোট ৫৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির বিপরীতে মূল পরিশোধ হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। মূল অর্থ পরিশোধের পর অবশিষ্ট অর্থ নিট বিক্রি হিসেবে গণ্য হয়। সেই হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ১০ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। এদিকে গতকাল থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English