বুড়ো হলে কী হবে, ট্রাম্প কিন্তু এখনো দারুণ সুদর্শন। আর শরীরেও বয়সের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিমত্তা। ট্রাম্প যখন প্রতিপক্ষ নিয়ে কথা বলেন, তখন সামান্যতম সৌজন্যের সুরও বাজে না তাতে। অর্থবিত্ত, সৌন্দর্য, আর ক্ষমতা তাকে বেপরোয়া করে তুলেছে অনেকটাই। তার সঙ্গে রয়েছে শ্বেতাঙ্গ বর্ণ অহঙ্কার এবং সম্প্রদায় বিদ্বেষ।
ট্রাম্পের শরীর-স্বাস্থ্য ভাল। বয়সের অনুপাতে আনুষঙ্গিক রোগ-ব্যাধি থেকেও তুলনামূলকভাবে মুক্ত তিনি। বিশ্ব জুড়ে এখন যে মহামারি চলছে, তাকেও পাত্তা দেননি রিপাবলিকান এই ধনকুবের প্রেসিডেন্ট। চীন যখন এর সংক্রমণে ত্রাহি চিৎকার শুরু করেছে, তখনো ট্রাম্প ঠাট্টা করে বলেছেন, তার দেশে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় এর চেয়ে (তখন উহানে মৃতের সংখ্যার তুলনায়) বেশি মানুষ মারা যায়।
এর পরে অবশ্য ধীরে ধীরে সুর পাল্টেছে তার। করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ‘ছড়িয়ে’দেয়ার দায় চাপিয়েছেন চীনের ঘাড়ে। বলেছেন, উহানের ল্যাবরেটরিতে চীনা বিজ্ঞানীদের তৈরি এই করোনাভাইরাস। চীনের বিরুদ্ধে তাই রীতিমতো যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠেছিলেন। চীন বারবার তার অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও কান দিচ্ছিলেন না তিনি। অবশেষে নিজের দেশের গোয়েন্দারা পর্যন্ত যখন বলল, উহানের ল্যাবরেটরিতে কোনো ভাইরাস তৈরি করা হয়নি, তখনই ধীরে ধীরে গলা নামাতে শুরু করেন তিনি।
২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার ট্রাম্পের প্রধান স্লোগান ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। তিনি সব দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষে রাখার অঙ্গীকার করে আসছেন। ট্রাম্পের কাছে হেলা ফেলার করোনা ভাইরাস মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র যখন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় সব দেশকে ছাড়িয়ে গেল, তখন অনেকেই খোঁচা দিয়ে বলেছেন, হ্যাঁ, আমেরিকা ফার্স্টই হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২৫ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা মহামারির প্রথম ধাক্কা সামলে যুক্তরাষ্ট্র যখন আস্তে আস্তে করে অর্থনীতির চাকা সচল করার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনি দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। গত পাঁচ দিনে ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ৭০০ এর বেশি মানুষ। যে কারণে খোলার আগেই আবারও অচল দেশটির অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রে যখন এই অবস্থা বিরাজ করছে তখন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে মাত্র চার মাস বাকি আছে। ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। গত ২০ জুন ওকলাহামার তুলসা শহরে প্রথম নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেন তিনি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের এই কঠিন মুহূর্তে তিনি আশানুরূপ সাড়া পাননি।
উলটো সমাবেশের আগে তার প্রচারণা দলের ছয় কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এছাড়া কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে ট্রাম্প তার ওই নির্বাচনী প্রচারণা ফের শুরুর ঘোষণা দিলে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যদিও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। কারণ করোনা ভাইরাসকে তিনি পাত্তা দিতে রাজি নন।
কিন্তু পরিস্থিতি এখন ট্রাম্পের জন্য প্রতিকূলই বলতে হবে। কারণ করোনা সংক্রমণরোধ, মৃত্যুর সহনীয় সংখ্যা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চরম অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ফলে ট্রাম্প নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছেন । যেসব অঙ্গরাজ্যে গত নির্বাচনে তিনি এগিয়ে ছিলেন সেখানে হয়তো পিছিয়ে পড়েছেন না হয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ট্রাম্পের ভূমিকায় উদ্বিগ্ন তার দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারাও। অনেক রিপাবলিকান কর্মীর মতে, করোনা মহামারিতে অর্থনীতি খারাপ হওয়ায় হারতে পারেন ট্রাম্প। এমনকী হাতছাড়া হতে পারে সিনেটও।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের লেখা বইটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড (যে ঘরে এসব ঘটেছে) শীর্ষক বইটিতে বোল্টন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই নেন আগামী নির্বাচনে আবার জিতে আসার কথা মাথায় রেখেই। তবে এ নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্যই এখন করোনা ভাইরাসকে ভয় পাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই ভয়ের প্রেক্ষিতে নাটকীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে করোনা থেকে ট্রাম্পকে সুরক্ষার ব্যবস্থা।
বেশি সংক্রমিত কোনো এলাকায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যাওয়ার আগে ভেন্যুগুলো ভালোভাবে পরিদর্শন করছেন অগ্রগামী নিরাপত্তা ও মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা। বাথরুম থেকে মঞ্চ সবখানে জীবাণু ধ্বংস করা হচ্ছে। করোনা টেস্টে নেগেটিভ ব্যক্তিরাই কেবল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বা সংস্পর্শে আসবেন। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে বারবার অঙ্গরাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল করতে চেষ্টা চালিয়েছেন। ট্রাম্পের এসব কার্যক্রমে জন বোল্টনের কথা সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, নির্বাচনে জয় ছাড়া কোনো কিছুই ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সূত্র : সিএনএন