ঢাকাই ছবিতে ৯ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। তাকে একবাক্যে বাংলা চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক সম্রাট বলে মানে সবাই।
কিন্তু রাজশাহীর এই সাধারণ যুবক কীভাবে বাংলা গানে একক অধিপতি হয়ে উঠলেন তা জানতে উৎসক সবাই।
জানা গেছে, এন্ড্রু কিশোরকে প্লেব্যাক রাজার আসনে বসানোর নেপথ্যে কাজ করেছেন প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক।
রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রশিদ গণমাধ্যমকে এমনটাই জানালেন।
গানের জগতে এন্ড্রু কিশোরের পর্দাপণের ইতিহাসের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আবদুর রশিদ বলেন, কয়েক শতাব্দী পরে একজন এন্ড্রু কিশোর জন্মায়। তার বিয়োগের ক্ষতি অপূরণীয়।
তিনি বলেন, এন্ড্রু কিশোর ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর ‘সুরবাণী সংগীত বিদ্যালয়’-এ গান শিখেছেন। এন্ড্রু ছাড়াও সে সময় এই বিদ্যালয়ে গান শিখত এম এ খালেক, রিজিয়া পারভীন, ইফফাত আরা নার্গিস, আবদুল খালেক ছানা, হাবিবুর রহমান লাবু, মাইনুল ইসলামের মতো সঙ্গীতজ্ঞরা।
আবদুর রশিদ বলেন, একবার দরগাড়া এলাইট ক্লাবের নতুন ভবন নির্মাণের তহবিল গঠনের উদ্দেশে রাজশাহী কলেজে নাটক ‘দুই মহল’ মঞ্চস্থ হয়। এ সময় ঢাকাই ছবিতে নায়করাজ রাজ্জাক বেশ জনপ্রিয়। সেই নাটক দেখতে সেদিন রাজ্জাক, পরিচালক আজাহারুল ইসলাম খান, প্রযোজক মজিবার রহমান চৌধুরী, বাবুল, চিত্রনায়িকা নূতন আসেন। নাটকের আগে স্থানীয় শিল্পীদের গান গাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হত। সেখানে এন্ড্রু কিশোর ও রিজিয়া পারভীন গান পরিবেশন করেন। এন্ড্রুর গান নায়করাজ রাজ্জাককে মুগ্ধ করে। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘আপনি এই ছেলেটিকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তার কণ্ঠ আমার ভালো লেগেছে। একেবারে সিনেমায় প্লেব্যাক করার মতো। আমি তাকে চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেব।’
তারপর এন্ড্রু কিশোর ঢাকায় যান। ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী’ গানের মধ্য দিয়ে প্লেব্যাকযাত্রা শুরু হয় তার।
ছবিটি মুক্তি না পাওয়া এন্ড্রুর অচিনপুরের রাজকুমারী গানটি তখন শ্রোতারা শুনতে পারেনি।তবে এরপর সঙ্গীতজ্ঞ আলম খানের সুপারিশে বাদল রহমানের শিশুতোষ এক্সপেরিমেন্টাল প্রজেক্ট ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ ছবিতে মি ‘ধুমধাড়াক্কা ধুম’ গানটি গান এন্ড্রু। যা ছিল তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
এরপর ‘এক চোর যায় চলে এ মন চুরি করে পিছে লেগেছে দারোগা’ গানটির মাধ্যমে শ্রোতাদের মধ্যে প্রথমবার প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে পরিচিতি এনে দেয় এন্ড্রুকে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়ে ফেলেন ১৫ হাজারেরও বেশি গান।
প্রসঙ্গত টানা ৯ মাসের বেশি ব্লাড ক্যান্সারে ভুগে ৬ জুলাই সন্ধ্যায় রাজশাহীতে বোনোর ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী।