শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন

থমকে আছে সব দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০
  • ৩৭ জন নিউজটি পড়েছেন

করোনার প্রভাব পড়েছে দেশের রাজনীতিতেও। থমকে আছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সবক’টি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। তবে বড় দল দুটি করোনা ইস্যুতে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মাধ্যমে মাঠ গরমের চেষ্টা করলেও বাকিগুলো গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়ার মধ্যেই পুরোপুরি সীমাবদ্ধ।

করোনাভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করায় একে একে সবকিছুতেই আঘাত হেনেছে। রাষ্ট্রীয়, সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক, পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান স্থগিত বা বাতিল হয়ে গেছে।

ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বদলে যেতে শুরু করে রাজনীতির অঙ্গনও। একের পর এক সংকুচিত ও বাতিল হতে থাকে রাষ্ট্রীয় এবং সরকারি বিভিন্ন আয়োজন। করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর আগাম সতর্কতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান পুনর্বিন্যাস করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও স্থগিত করতে বাধ্য হয় তাদের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি। কোনো দলই জনসমাগমের মতো কর্মসূচির কথা আপাতত আর ভাবছে না।

চলমান পরিস্থিতিতে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাদের তৃণমূলের সম্মেলন স্থগিত করে। খুব দরকার না হলে দলীয় কার্যালয়মুখী হচ্ছেন না কোনো দলেরই শীর্ষ নেতা। এমনকি দলগুলোর পক্ষ থেকে এ সংকটকালীন সময়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও সেভাবে কোনো সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান রোববার যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। জন্ম থেকে দলটি গণমানুষের জন্যই রাজনীতি করে আসছে। এ মুহূর্তে বড় সংকট করোনা মোকাবেলা। এ ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা।

আওয়ামী লীগ এ কাজটিই প্রাধান্য দিয়ে করছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে। কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘রাজনীতি যদি হয় মানুষের জন্য, তাহলে বলব মানুষকে বাঁচানোই এখন বড় রাজনীতি। আওয়ামী লীগ এ কাজটিই করছে।’

অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা নানাভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত। এর মধ্যেও এ করোনাকালীন সময়ে জনগণের পাশে সাধ্য অনুযায়ী আছি। আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানোটাই জরুরি। এটাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার এ মহামারীর সময় দেশে রাজনীতি নেই। সভা-সমাবেশের সুযোগ নেই। আন্দোলন-সংগ্রামের সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরা অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যেই আমরা ইতোমধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে দলটির সারা দেশের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন করার নির্দেশ ছিল। তবে ৪৪টি জেলায় সময়স্বল্পতাসহ কিছু কারণে তখন সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এসব জেলায় নতুন বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সম্মেলন করার লক্ষ্য ছিল ক্ষমতাসীন দলের। এ লক্ষ্যে কার্যক্রমও চলছিল।

মার্চের শুরুতেই একাধিক জেলায় সম্মেলনের আয়োজনও হয়। এর আগে রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে সাংগঠনিক সফর শেষ করেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা। করোনার প্রভাবে এরপর দলটির যাবতীয় সাংগঠনিক তৎপরতা থেমে গেছে।

একইভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে পূর্বঘোষিত ১১ মার্চে বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি। সেই থেকে দলটির আর কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এ সময়ে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করলেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আপাতত তারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখে ঘরোয়াভাবেই জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের বাইরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), সাম্যবাদী দল, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-গানি), ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বাম-ডান-প্রগতিশীল ঘরানার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি থেমে আছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরাও এ সময়ে একেবারে নিশ্চুপ।

মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি করোনার প্রভাব পড়ে জাতীয় সংসদেও। করোনাকালীন সময়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার রক্ষায় এপ্রিলে মাত্র ১ দিনের জন্য জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসে। যা ছিল নজিরবিহীন। এরপর নতুন অর্থবছরের বাজেট দেয়ার জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় ১০ জুন জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসে।

১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মাঝে আরও দু’দিন অধিবেশন চলে। এর মধ্যে একটি পাস হয় সম্পূরক বাজেট। আরেকদিন বাজেট নিয়ে সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার অর্থবিল পাস হয়। আর মঙ্গলবার পাস হয় বাজেট ।

করোনার প্রভাব ছিল সংসদেও। সেখানে কোনো উত্তাপ ছিল না, ছিল না তেমন কোনো বিতর্ক বা সরকারবিরোধী সমালোচনা। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১১০ জনকে পালাক্রমে অধিবেশনে যোগ দিতে বলা হয়। যারা উপস্থিত হন, তারা পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন।

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলো সব ধরনের সভা-সমাবেশ বা জনসমাগম স্থগিত করে দিয়েছে। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত দলের সভা, সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার স্থগিত রেখেছে আওয়ামী লীগ। রাজনীতির ময়দানে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ বিএনপিও বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধনসহ সব ধরনের কর্মসূচি পালন থেকে আপাতত বিরত থাকছে। এরই মধ্যে বিএনপি ১৫ জুলাই পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করেছে।

তবে ঘরোয়াভাবে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থেমে নেই। ‘নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য’ রাজনীতিবিদের ‘তর্ক লড়াই’ চলছে করোনা নিয়ে, সেই জনগণের পাশে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। বরং এ দুঃসময়েও চলছে কাদা ছোড়াছুড়ির সংস্কৃতিও।

প্রথম থেকেই ‘করোনা প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ’ বলে দাবি করছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলছে, করোনা নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর সঙ্গে এ নিয়ে ‘ইস্যু খুঁজছে’ বিএনপি। আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর যাবতীয় তৎপরতা গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়ার মধ্যেই পুরোপুরি সীমাবদ্ধ রয়েছে।

করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল প্রায় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন বা ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করত। সেসব দলেরও করোনা পরিস্থিতিতে জনমুখী কোনো কর্মসূচি নেই।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও নেই অপেক্ষাকৃত অসচেতন ও গরিব মানুষের পাশে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক কোনো দলের নেই জনগণকে সচেতন করার মতো কর্মসূচিও। জনগণের ইস্যুতে যে বাম দলগুলো আগে বেশ সরব ছিল, তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কর্মসূচির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

যদিও এ অভিযোগ মানতে নারাজ দেশের বাম ঘরানার শীর্ষ রাজনীতিক এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ প্রসঙ্গে তিনি রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের সুযোগ-সুবিধা বেশি। তাই তাদের তৎপরতা চোখে পড়ে। আমরাও আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এ সময়েও আমরা আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। তবে হয়তো সেটা মাঠে নয়, ঘরোয়াভাবে’।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English