মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

ধান–চালে নতুন মজুতদারে বাড়ছে দাম

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০
  • ৪৭ জন নিউজটি পড়েছেন

করোনা সংক্রমণের এই সময়ে সবচেয়ে বড় সুখবর নিয়ে এসেছিল দেশের কৃষি খাত। বোরোতে ফলন হয়েছে দুই কোটি টন। আর বড় কোনো বিপর্যয় ছাড়াই সব ধান কাটতে পেরেছিলেন কৃষক। কিন্তু তারপরও গত দুই সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বোরো ওঠার পর ধান-চালের দাম না কমে উল্টো বাড়ছে কেন—এই জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেল ভিন্ন এক কারণ। অর্থনীতিবিদ ও চালকলমালিকেরা বলছেন, নতুন এক মজুতদার গোষ্ঠী বাজারে ধান-চালের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের বিনিয়োগ করোনার কারণে থমকে আছে। এতে কিছু ব্যবসায়ী বিনিয়োগ উঠিয়ে নিয়ে যুক্ত হয়েছেন ধান-চালের ব্যবসায়। তাঁরা ধান-চাল কিনে রাখছেন। এতে দাম বাড়ছে।

নতুন কোনো গোষ্ঠী চাল মজুত করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর দেশের সব কটি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘এই সময়ে চালের দাম এতটা বাড়ার কথা নয়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ মজুত করছে কি না, সে বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেছি। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

চালকলমালিকেরা বলছেন, ভারতে চালের সংগ্রহ মূল্য সরকারিভাবে ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়া, বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে একদল ব্যবসায়ী মনে করছেন, চালের দাম সামনে আরও বাড়বে। তাই তাঁরা চাল ও ধান কিনে মজুত করছেন।

নওগাঁ, কুষ্টিয়াসহ দেশের প্রধান ধান-চালের পাইকারি বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে চালের দাম চালকলগুলো থেকেই এক থেকে দুই টাকা করে বাড়ানো হচ্ছে। এসব জেলার বড় হাটগুলোতেও ধানের দাম বাড়ছে। ধানের সরবরাহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমানে মোটা ধান প্রতি মণ ৮৫০ থেকে সাড়ে ৯৫০ টাকা, মাঝারি মানের ধান ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং সরু চাল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

বোরো মৌসুমের শুরুতে চালকলমালিকেরা কম দামে বিপুল পরিমাণে ধান সংগ্রহ করে রেখেছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এপ্রিলে বোরো কাটা শুরু হওয়ার সময় ধানের দাম প্রতি মণ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা বিক্রি হয়।

নওগাঁ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার বড় হাটগুলোতে ধানের দাম বাড়ছে।
ধানের সরবরাহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জানতে চাইলে দেশের অন্যতম বড় ধান-চালের মোকাম এলাকা নওগাঁ জেলা ধান–চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নীরদবরণ সাহা বলেন, বাজারে ধান ওঠা তিন ভাগের দুই ভাগ কমে গেছে। চালকলমালিকেরা বাজারে ওঠা ধানের এক–তৃতীয়াংশ কিনলেও বাকি অংশ বড় কৃষক ও একদল নতুন মজুতদারের হাতে আছে। তাঁরা শহরের অন্য খাত থেকে টাকা এনে এখন গ্রামে চাল মজুতের ব্যবসা করছেন। এতে দাম বেড়ে গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত সরকারি গুদামগুলোতে ৮ লাখ ৮১ হাজার টন চাল, ২ লাখ ৯৮ হাজার টন গম মজুত আছে। বর্তমানে মোটা চাল ৪০ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; আর সরু চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরু চালের দাম গত এক সপ্তাহে আড়াই শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, দেশের বড় ৫০টি চালকলমালিকের বিপুল পরিমাণে ধান–চাল মজুতের ক্ষমতা আছে। তাঁরা ওই মজুত দিয়ে বাজারে দামে প্রভাব ফেলতে পারেন এটা যেমন সত্য, তেমনি দাম বাড়তে থাকায় শহরের একদল ব্যবসায়ী গ্রামে গিয়ে ধান–চাল মজুতের ব্যবসায় নেমেছেন, সেটাও ঘটছে। একই সঙ্গে করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি–বেসরকারিভাবে চাল কেনা বেড়ে গেছে। এতে বাজারের ওপর চাপ পড়ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত সারা দেশে কোথায় কী পরিমাণে মজুত হচ্ছে, তার খোঁজ নেওয়া।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English