শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন

পরকালে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০
  • ৩৮ জন নিউজটি পড়েছেন

প্রত্যেক মুসলমান এ কথা বিশ্বাস করে যে দুনিয়ার জীবনই একমাত্র জীবন নয়। মৃত্যুর পর রয়েছে অনন্তকালের জীবন। ইসলামের পরিভাষায় সেটাকে আখিরাত বা পরকাল বলা হয়। পরকালে দুনিয়ার প্রতিটি কাজের হিসাব-নিকাশ হবে। ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান ও প্রতিফল দেওয়া হবে। পরকালে গোটা জীবনের প্রতিটি কাজ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। পরকালে সব মানুষ বিশেষভাবে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, সেগুলোর কয়েকটি এখানে আলোচনা করা হলো—

কবরে তিন প্রশ্ন

পরকালের প্রথম ধাপ হলো কবর। কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবরে মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। এক. তোমার রব কে?

দুই. তোমার দ্বিন কী? তিন. এই লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? কবরবাসী যদি মুমিন হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারবে। আর যদি কাফির হয়, তাহলে বলবে, আফসোস! আমি কিছুই জানি না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৫৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০)

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন মানুষের আমলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।’ রাসুল (সা.) আরো বলেন, আমাদের রব ফেরেশতাদের বলবেন—অথচ তিনি সর্বাধিক অবগত, তোমরা আমার বান্দার নামাজ দেখো, সে তা পরিপূর্ণ করেছে, নাকি অসম্পূর্ণ রেখেছে। যদি পরিপূর্ণ হয়, তাহলে পূর্ণই লেখা হবে। আর যদি তাতে কিছু কমতি থাকে, তাহলে তিনি বলবেন, তোমরা দেখো আমার বান্দার কোনো নফল (নামাজ) আছে কি না। যদি তার নফল নামাজ থাকে তিনি বলবেন, আমার বান্দার ফরজের ঘাটতিকে নফল দ্বারা পূর্ণ করো। অতঃপর এভাবেই অন্য আমলসমূহকে গ্রহণ করা হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৬৪)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কারো নামাজ যদি সঠিক হয়, তাহলে সে সফলকাম ও কৃতকার্য হবে। আর নামাজ যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৩; নাসাঈ, হাদিস : ৪৬৫)

বিশেষ পাঁচ বিষয়ে প্রশ্ন

ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত আদম সন্তানের পা তার প্রতিপালকের সামনে নড়বে না। (তাকে প্রশ্ন করা হবে) তার জীবনকাল সম্পর্কে, সে তা কিভাবে কাটিয়েছে। তার যৌবনকাল সম্পর্কে, সে তা কিভাবে শেষ করেছে। তার সম্পদ সম্পর্কে, সে তা কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোন পথে ব্যয় করেছে। আর সে যে জ্ঞান অর্জন করেছে, সে বিষয়ে কী আমল করেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)

আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন

মহান আল্লাহ দুনিয়াতে তাঁর বান্দাদের অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। এসব নিয়ামত সম্পর্কে তিনি তাঁর বান্দাদের জিজ্ঞেস করবেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘এরপর সেদিন অবশ্যই তোমাদের নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা : তাকাসুর, আয়াত : ৮)

চোখ-কান সম্পর্কে প্রশ্ন

কিয়ামতের দিন মানুষকে তার চোখ, কান, অন্তর ও অর্জিত জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, হৃদয়—প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (কিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)

ওয়াদা ও অঙ্গীকার সম্পর্কে প্রশ্ন

কিয়ামতের দিন ওয়াদা ও অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ‘…আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)

কুফর ও শিরক সম্পর্কে প্রশ্ন

ঈমানের বিপরীত হলো কুফর ও শিরক। যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে না এবং যারা আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে কাউকে শরিক করে, তাদের কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘এরপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, কোথায় আমার শরিকরা, যাদের কারণে তোমরা (নবীদের সঙ্গে) শত্রুতা করতে? তখন (ফেরেশতা বা মুমিনরা) যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, তারা বলবে, নিশ্চয়ই সব লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল আজ শুধু কাফিরদের জন্যই।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ২৭)। মহান আল্লাহ আমাদের পরকালের প্রশ্নগুলোর যথাযথ জবাব দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English