করোনাভাইরাসের রক্তচক্ষু এড়িয়ে ইউরোপে এখন পুরোদমে চলছে ফুটবল লিগ। শুধু ফুটবল কেন? ক্রিকেটেও তো মাঠে গড়িয়েছে। গত মাসে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে উইন্ডিজ, সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডও খেলেছে। ৮ জুলাই থেকে এই দু’দলের টেস্টের মধ্য দিয়েই মাঠে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। পাকিস্তানও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চলে গেছে ইংল্যান্ড। আর ঘরোয়া ক্রিকেট তো মাঠে ফিরেছে সেই ৬ জুন, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়।
শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া ক্রিকেট চালু না হলেও তারা অনুশীলন ক্যাম্প করে নিজেদের প্রস্তুত রাখছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার জন্য দল গোছাচ্ছে। বসে আছে কেবল ভারত ও বাংলাদেশ। ভারত অবশ্য আইপিএল আয়োজনের উইন্ডো বের করা নিয়ে ব্যস্ত আছে। কিন্তু বাংলাদেশ কী করছে? করোনায় একেবারে স্থবির হয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দেশের ক্রিকেটের প্রাণকেন্দ্র শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের তালাবদ্ধ প্রধান ফটক যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান চিত্র। বিশ্ব ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে লিখেছেন-
নাজমুল হক নোবেল
সফর শুরু পাকিস্তানের
ইংল্যান্ড রওনা হওয়ার প্রাক্কালে ঘোষিত দলের এক-তৃতীয়াংশ (১০ জন) খেলোয়াড় করোনা পজিটিভ হওয়ায় বড় শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল পাকিস্তান দল। তাই বলে ভড়কে যায়নি পাকিস্তান বোর্ড। পিসিবির প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান, সেদিনই ঘোষণা দেন নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সফর হবে। তার কথামতোই নির্ধারিত দিনেই ম্যানচেস্টার গিয়ে পৌঁছেন আজহার আলী-বাবর আজমরা। তারা ওস্টারশায়ারে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। আশার কথা হলো, এরই মধ্যে পজিটিভ হওয়া মোহাম্মদ হাফিজ, ওয়াহাব রিয়াজ, শাদাব খানসহ দশ ক্রিকেটার নেগেটিভ হয়েছেন। তারা রওনা হয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের পথে। সফরে তারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি টেস্ট ও তিনটি টি২০ খেলবে।
নিজেদের প্রস্তুত রাখছে শ্রীলঙ্কা
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সফর বাতিল করার পর অখ অবসর লঙ্কান ক্রিকেটারদের হাতে। তাই বলে বসে নেই তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখছে তারা। এ লক্ষ্যে তারা কলম্বোতে গত মাসের শুরুতে জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটের ১৩ বোলারকে নিয়ে ১২ দিনের একটি আবাসিক ক্যাম্প করে। এরপর ব্যাটসম্যানদের নিয়েও আলাদা ক্যাম্প করে তারা। বর্তমানে ক্যান্ডিতে ত্রিশ ক্রিকেটারকে নিয়ে আরও
একটি আবাসিক ক্যাম্প হচ্ছে। সেখানে নিজেদের মধ্যে ম্যাচও খেলছেন তারা। লঙ্কান কোচ মিকি আর্থার জানিয়েছেন, ২৫ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মতো পর্যায়ে চলে যাবে তার দল।
ফেরার রূপরেখা নেই বিসিবির
জুনের শুরুতে শেরে বাংলায় গিয়ে একা একা অনুশীলনের অনুমতি চেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু বিসিবি থেকে তাকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি। মাঝে একদিন অবশ্য শামসুর রহমান শুভ চুপিসারে স্টেডিয়ামে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে এসেছিলেন। ওই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে কেউ প্রবেশই করতে পারেননি। সহসা কেউ প্রবেশ করতে পারবেন বলেও মনে হয় না।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস চেয়ারম্যান আকরাম খান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কমপক্ষে আরও ১০-১৫ দিন দেখার পর ক্রিকেট মাঠে ফেরানোর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করবেন। আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে দেশের করোনা পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, তাহলে প্রশ্নই আসে না এসব চিন্তার। তবে আকরামের আশা, কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। আর পরিস্থিতি ভালো হলে দ্রুতই তারা অনুশীলন শুরু করে দিতে পারবেন বলেও জানালেন তিনি। তাদের নাকি সে পরিকল্পনা করাই আছে। প্রায় চার মাস ধরে বিসিবির কার্যক্রম বলতে গেলে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
তবে একটু সাহস করলেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারত। শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবে রাজি হলেই হতো। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ ঝুঁকি নিয়েই ইংল্যান্ড গেছে। সে তুলনায় শ্রীলঙ্কা তো অনেক নিরাপদ। দ্বীপরাষ্ট্রটিতে করোনা সংক্রমণ নেই বেশ কিছু দিন হলো। সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে সেখানে মাত্র হাজারখানেক লোক সংক্রমিত হয়েছিল। ইংল্যান্ড যেমন করে দুটি দলকে চার্টার্ড ফ্লাইটে নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রেখে তারপরও দর্শকশূন্য মাঠে খেলার আয়োজন করেছে, ঠিক এমন প্রস্তাব বিসিবির কাছে পাঠিয়েছিল লঙ্কান বোর্ড। কিন্তু বিসিবি সেটা নাকচ করে দেয়। জানা গেছে, বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা খেলায় ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। বিসিবিও এ বিষয়ে কোনো জোরাজুরি করতে চাইছে না। তবে ক্রিকেট বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছে ঘরোয়া বিভিন্ন লিগ খেলে বেড়ানো হাজারো ক্রিকেটার। তাদের জন্য বিসিবি সামান্য সহায়তা দিলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। যে কারণে ক্রিকেট খেলে জীবিকা নির্বাহ করা অনেকেই কৃষিকাজ, সবজি বিক্রি করে কোনোমতে দিন যাপন করছেন। অতি সত্বর ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু না হলে তারা আরও মানবেতর পর্যায়ে চলে যাবেন।
ইংল্যান্ড-উইন্ডিজ টেস্টে প্রত্যাবর্তন
করোনাকালে টেস্ট ক্রিকেটকে মাঠে ফেরানোর গুরুত্বটা যেন নিয়েছে ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চার্টার্ড ফ্লাইটে উড়িয়ে এনে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রেখে তারপর দর্শকশূন্য বায়োসিকিউর স্টেডিয়ামে টেস্ট শুরু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। এজন্য এক মাস আগে ক্যারিবীয়দের বিশাল বহর উড়িয়ে নিয়ে এসেছে তারা। ওল্ড ট্র্যাফোর্ড সংলগ্ন হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রাখায় তারা তখন মাঠে অনুশীলনও করতে পেরেছে। গত মাসে তারা নিজেদের মধ্যে সেখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলে। ক’দিন পর পর পুরো বহরের কভিড-১৯ টেস্ট করানো, তাদের করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। সে কঠিন কাজটাই এখন পর্যন্ত দারুণ দক্ষতায় সামলাচ্ছে ইসিবি। ইংল্যান্ডের না হয় বিশাল অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার শঙ্কা আছে বলেই ঝুঁকি নিয়ে এ আয়োজন করছে। তবে এই কঠিন সময়ে ক্রিকেট খেলতে রাজি হওয়ায় অবশ্য ক্যারিবীয়রা ধন্যবাদ প্রাপ্য। তাদের তিন ক্রিকেটার আবার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে আসেনওনি।
‘নয়া ক্রিকেট’ দিয়ে ফিরছে প্রোটিয়ারা
গত মাসেই নতুন ধরনের এক ক্রিকেট ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরতে চেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু সরকার অনুমতি না দেওয়ায় সেটা হয়নি। তবে ১৮ জুলাই ‘নেলসন ম্যান্ডেলা দিবসে’ তারা তিন দলের অংশগ্রহণে ৩৬ ওভারের একটি অভিনব ক্রিকেট ম্যাচ দিয়ে ছয় সপ্তাহের লকডাউন ভেঙে মাঠে ফিরছে। এবি ডি ভিলিয়ার্স, কুইন্টন ডি কক, কাগিসো রাবাদার নেতৃত্বে তিনটি দল অংশ নেবে ওই ম্যাচে।
অসি-কিউইরাও ব্যস্ত
করোনার বিরতির পর ক্রিকেট সর্বপ্রথম মাঠে গড়ায় অস্ট্রেলিয়ায়। গত ৬ জুন ডারউইনে তিন দিনব্যাপী একটি টি২০ টুর্নামেন্ট হয়। এরপর নর্দান টেরিটরিতে এখন ক্লাব ও ডিস্ট্রিক্টগুলোর মধ্যে ওয়ানডে টুর্নামেন্ট চলছে। মৌসুমের এই সময়টাতে অস্ট্রেলিয়ার এ অঞ্চলেই ক্রিকেট খেলে গ্রীষ্ফ্মের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। নিউজিল্যান্ডেও ঘরোয়া ক্রিকেট মাঠে ফেরানোর কাজে পুরোদমে চলছে। ৩০ জুন ছিল ২০২০-২১ প্রথম শ্রেণির মৌসুমের জন্য ঘরোয়া বিভিন্ন দলের স্কোয়াড ঘোষণার শেষ দিন। ওটাগো, নর্দান ডিক্ট্রিকস, ক্যান্টারবারিসহ সব দলই দল ঘোষণা করেছে। অচিরেই অনুশীলন শুরু করবে তারা।