ইসলামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কথা, অনর্থক বাক্যব্যয় নিষিদ্ধ। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের শুদ্ধতম ও অর্থপূর্ণ উচ্চারিত ধ্বনিসমষ্টিই ভাষা। মুখের উচ্চারণের সঙ্গে মনের সংশ্লেষ না ঘটলে তা হয় অনর্থক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা তা মুখে মুখে ছড়িয়ে দিচ্ছিলে এবং এমন বিষয় তোমরা উচ্চারণ করছিলে মুখে, যে সম্পর্কে তোমাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান ছিল না। তোমরা বিষয়টিকে একটি সাধারণ কথা মনে করেছিলে। অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল অত্যন্ত গুরুতর বিষয়।’ (সুরা নুর, আয়াত : ১৫)
এ আয়াতে মুখে মুখে কথা চালাচালি ও অন্যের বিরুদ্ধে অপবাদ রটনাকে মারাত্মক বিষয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে কথা-কাজে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ হলো ‘মুনাফিকি’। এটি অপরাধ। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো—‘তোমরা সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ কোরো না এবং জেনেশুনে সত্যকে গোপন করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪২)
মন ও মুখের সংশ্লেষহীন বাক্য মূল্যহীন। এমন কথা কখনোই বলা উচিত নয়, যার কর্মগত বাস্তবতা নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ঈমান এনেছ যারা, তারা শোন/যে কাজ কর না কিছু, বল তা কেন?/আল্লাহর কাছে অতি ঘৃণার তাহা/এমন কথা বল, কর না যাহা।’ (কাব্যানুবাদ, সুরা সাফ, আয়াত : ২-৩)
তাইতো বলতে হয়, নৈতিকতা ও বাক্সংযম পরস্পর সম্পৃক্ত। বাক্সংযমের বিষয়ে প্রিয় নবী (সা.) অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। এর সঙ্গে জান্নাত লাভের সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী ও দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের জামানত দিতে পারে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’ (বুখারি)
বাক্সংযমের অভাবে মানুষ মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া পাপ কাজ, তার সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করা কুফরি কাজ। (বুখারি ও মুসলিম)
দ্বিমুখী আচরণ মারাত্মক অন্যায় ও জঘন্য বিষয়, এর পরিণতি ভয়াবহ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই মুখবিশিষ্ট হয় (যার কাছে যায় তারই প্রশংসা গায়) কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির জিহ্বা হবে আগুনের তৈরি।’ (দারেমি)
আমরা মুখে যা কিছু বলি আর যা কিছু করি আল্লাহ তার সব কিছু জানেন, দেখেন ও বোঝেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন—‘মানুষ যে কথাই বলুক না কেন, তার কাছে একজন তৎপর প্রহরী প্রস্তুত থাকেন।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ১৮)
‘অহেতুক কথা’ ও ‘কথার কথা’ বিপদের বিষয় হতে পারে। মহামতি প্লেটো বলতেন, ‘একটি কথা বলার আগে ১০ বার ভেবে বলো।’ তাই বেশি কথা বলা যাবে না। তবে ন্যায়সংগত কথা বলা জরুরি।