বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

মধ্যমেয়াদে ভ্যাটের চাপ বাড়বে ভোক্তার

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০
  • ৪৪ জন নিউজটি পড়েছেন

করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের অস্বাভাবিক ব্যয় বেড়েছে। সামনের দিনগুলোয়ও এ বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এমন পরিস্থিতি সামলে নিতে আগামী ৩ অর্থবছরে (২০২০-২৩) শুধু ভ্যাট থেকে ৬ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ভ্যাট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ সংস্থানের কারণে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়বেন ভোক্তারা।

অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা- করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। এতে কিছু স্বাভাবিক খাতে আরও বেশি মাত্রায় কর চাপিয়ে দেয়া হতে পারে। হয়তো সেখানে এমনিতে ভ্যাট হার বেশি আছে।

মাত্র ৩ দিন পর শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর। করোনা পরিস্থিতির মুখে নতুন অর্থবছরে (২০২০-২১) ভ্যাট খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনীতির বিবৃতিতে বলা হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত থেকে আদায় করা হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা।

আগামী ৩ বছর বড় অঙ্কের ভ্যাট আদায় করতে কয়েকটি সংস্কার আনা হচ্ছে এ খাতে। বিশেষ করে নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন করা হবে। এমনটি ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, নতুন আইনের কতিপয় ধারার পরিবর্তন করা হবে। এছাড়া আইনের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক বিধিমালা ২০১৬-এর কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে মধ্য মেয়াদি ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারখানা ভ্যাট দেয়ার ব্যাপারে নিগোসিয়েশনে যেতে চাইবে। কারণ তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। অপরদিকে করের বোঝা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার ওপর ছেড়ে দেয়। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মোটা অঙ্কের ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু খাতের ওপর এটি আরোপ করতে পারে সরকার। কিন্তু ওই সব খাতে এমনিতেই ভ্যাট বেশি আছে, সেখানে কমানো দরকার।

তিনি আরও বলেন, এতে ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। তবে কর কাঠামা ব্যবস্থা উন্নয়ন ছাড়া এ বড় আকারের ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিবৃতিতে ভ্যাট প্রসঙ্গে বলা হয়, বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে। সে বাস্তবতা বিবেচনায় সংশোধিত বাজেটে ভ্যাট খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরের যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি অর্জন করতে হলে ভ্যাট খাত থেকে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার করা হবে। বিশেষ করে কর সংক্রান্ত আইন (আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস) সহজভাবে প্রণয়ন করে সবার কাছে উপস্থাপন করা হবে।

জানা গেছে, দেশে ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মনে করছে ভ্যাট আদায়ের জন্য এটি একটি সম্ভাব্য খাত। পাশাপাশি এ খাত থেকে ভ্যাট আহরণও চ্যালেঞ্জিং। ম্যানুয়াল হিসেবে এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় হচ্ছে মাত্র ৩ শতাংশ। এ খাত থেকে শতভাগ ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ভ্যাট নিয়ে ততটা কড়াকড়ি না থাকায় অনেক সময় ক্রেতা ভ্যাট দিতেন না, বিক্রেতাও জোর করতেন না। তবে সবাইকেই ভ্যাট দিতে হবে। পথের ভিখারি থেকে কোটিপতি পর্যন্ত সবাইকে একই হারে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) দিতে হয়। কিন্তু বর্তমান করোনার কারণে এমনিতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ আরও গরিব হবে। অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন।

বিশেষ করে দিন মজুর নিম্ন আয়ের মানুষ এদের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটির উপরে। ইতোমধ্যে তাদের ক্রয় ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। কেউ কেউ কর্মহীন হয়ে আয় শূন্য হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে সামনের দিনগুলোতে ভ্যাটের পরিমাণ বাড়বে। শেষ পর্যন্ত এটি ভোক্তার ওপর গিয়ে চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ ভ্যাটের টাকা ভোক্তাকে নানাভাবে গুনতে হয়।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English