মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

মাথা ঘুরা সমস্যা

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০
  • ৪৬ জন নিউজটি পড়েছেন

মাথা ঘুরাকে মেডিকেল ভাষায় ভাটিগো বলে। ভারসাম্যহীনতা, চলাফেরার সময় ভারসাম্য ঠিক না থাকা, হঠাৎ করে মাথা ঘুরা, হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখা থেকে শুরু করে মারাত্মক রকম মাথা ঘুরানো, সঙ্গে বমি হওয়া পর্যন্ত বিভিন্নভাবে এ সমস্যার প্রকাশ পেতে পারে।

এটা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা দিন বা মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ফলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে।

আমাদের শরীরের ভারসাম্য কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা অনেকেই জানি না, এ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে প্রধান হল আমাদের অন্তঃকর্ণ। কানের দুটো কাজ- একটা হল শ্রবণ, যেটা ককলিয়া দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। আরেকটা হল শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা যেটা ভেসটিবুলার অরগান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত।

আমাদের অন্তঃকর্ণের পঞ্চাশ ভাগেরও বেশি এলাকাজুড়ে ভেসটিবুল ও সেমি সার্কুলার কেনাল অবস্থিত যার একমাত্র কাজ হল শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখ, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বিশেষত ঘাড়ের জয়েন্ট আমাদের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।

এ কান, চোখ ও বিভিন্ন জয়েন্ট থেকে সিগন্যালগুলো মস্তিষ্কের সেরিবেলামে যায় এবং এখানে বিভিন্ন দিকে এবং তার শুরুতে বিবেচনার মাধ্যমে শরীরে ভারসাম্য রক্ষা হয়ে থাকে। এ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যে কোনো সমস্যা হলে রোগী ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে পারে অথবা মাথা ঘুরা অনুভূত হতে পারে।

সাধারণভাবে মাথা ঘুরানো সমস্যার কারণগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যদি এটা মস্তিষ্কের কারণে হয়ে থাকে তাহলে মাথা ঘুরানোর সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস, মস্তিষ্কে ব্যথা, চেতনাশক্তি ঠিকমতো কাজ না করে বা অসচেতনতা, বুদ্ধিমত্তা বা শ্রবণশক্তি ঠিকমতো কাজ না করা- এসব সমস্যা জড়িত থাকে। সাধারণত এটা নিউরোলজিস্ট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। যেহেতু এর সঙ্গে মস্তিষ্কের কিছু অংশের কর্ম ক্ষমতাহীনতা জড়িত থাকে, ফলে এ রোগ সাধারণত পুরোপুরি সারে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘাড়ের আর্থ্রাইটিসের কারণে বা মস্তিষ্কের রক্তনালির ভেতরে চর্বি জমে রক্তনালি ছোট হয়ে গেলে অথবা রক্তনালির ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল কমে যায় এবং তার থেকে মাথা ঘুরাতে পারে।

কানের সমস্যা থেকে মাথা ঘুরানো

আমাদের অন্তঃকর্ণের ভেসটিবুল ও সেমি সার্কুলার ক্যানাল, আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার প্রধান অঙ্গ। বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণের অনেক সমস্যা থেকে কানের ভেতরে ভারসাম্য রক্ষার পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে, যার ফলে মাথা ঘুরাতে পারে।

কানের থেকে মাথা ঘুরানো

* কানের ভেতরে ময়লা জমে গেলে

* বহিঃকর্ণের ইনফেকশন

* মধ্য কর্ণের ইনফেকশন যা নাকের পেছন দিয়ে কানের ভেতরে যায়

* কানের পর্দা না থাকা

* ঘনঘন কান পাকা

* কোলেস্টিয়াটমা ও কানের মধ্যে পানি জমে থাকা

* ঘনঘন অথবা বেশি মাত্রায় সর্দি-কাশি হয়ে ইউস্টিশিয়ান টিউবের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে মাথা ঘুরানো হতে পারে

* নাকের হাড় বাঁকা থাকা

* সাইনাসের দীর্ঘদিন ইনফেকশন সমস্যা থেকেও মাথা ঘুরানো হতে পারে।

এছাড়া অন্তঃকর্ণের কিছু সমস্যার জন্য মাথা ঘুরাতে পারে, তার মধ্যে প্রধান হল অন্তঃকর্ণের ভেতরে ভাইরাল ইনফেকশন। এটি সাধারণত কমন কোল্ড অথবা প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে। এছাড়া চিকেনপক্স, মিজেলস থেকেও কানের ভাইরাল ইনফেকশন হতে পারে।

কান ও আশপাশের কিছু জটিল রোগের জন্য মাথা ঘুরাতে পারে যেমন-

* অটোস্ক্লোরোসিস-কানের ভেতর হাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।

* মেনিয়ার্স ডিজিজ-অন্তঃকর্ণের প্রেসার বেড়ে গেলে।

* কানের ভেতর টিউমার বা ক্যান্সার।

* নাকের পেছনের ক্যান্সার।

মাথা ঘুরালে সাধারণভাবে করণীয়

* মাথা ঘুরার সমস্যা বেশি থাকলে একা একা চলাফেরা ঠিক নয়। একিউট অবস্থাতে একা একা চলাফেরা পরিত্যাজ্য। এ অবস্থাতে বিশ্রাম জরুরি এবং অন্যান্য কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

* ঘনঘন বমি হলে শরীরের ভেতরে পুষ্টি, লবণ ও পানির ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একিউট অবস্থাতে স্টিমিটিল বা সিনারন জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। দিনে তিনটা করে খাবেন অথবা প্রয়োজনে স্টিমিটিল ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।

এরপরও সমস্যার উন্নতি না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

লেখক : নাক, কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, ইমপালস হাসপাতাল, ঢাকা

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English