করোনা টেস্টিং কিট, মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী আমদানিতে দুর্নীতির ক্ষমাহীন অপরাধ উল্লেখ করে এর তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল। একইসঙ্গে করোনা পরীক্ষার ফি বাতিল, অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন, ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল আদায় স্থগিতেরও দাবি জানিয়েছে জোটটি। সোমবার দুপুরে জোটের সমন্বয়কারী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। রোববার অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্বের অভিজ্ঞতার আলোকে বিলম্বে বাস্তবায়ন সম্ভব- এমন মেগা প্রকল্প স্থগিত করে সেই অর্থে করোনা সংকট মোকাবেলায় বরাদ্দ করতে হবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দৈনিক কমপক্ষে ৬০ হাজার কোভিড টেস্ট, মালিকানা নির্বিশেষে সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসা কেন্দ্র আইসিইউ, ভেল্টিলেশন, আইসোলেশন ও পর্যাপ্ত ওষুধ, প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের মাধ্যমে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করার দাবি জানাচ্ছে ২০ দল।
তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফল অভিজ্ঞতা যথাসময়ে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতির ক্রমাবনতি রোধ করা সম্ভব হতো। ২০ দল মনে করে, আমাদের দেশের মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, জননেতা, ঊর্ধ্বতন আমলারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হতো।
নজরুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান যথা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধে বিপন্ন জনগণকে বাধ্য করার সরকারি উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব বিল আদায় স্থগিত এবং কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের বিল মওকুফের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
করোনা পরীক্ষার ফি বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নেপালের মতো দেশেও কোভিড টেস্টের জন্য জনগণকে টাকা খরচ করতে হয় না। এমনকি প্রাইভেট হাসপাতালে পরীক্ষা করতে হলে তার বিল সরকার পরিশোধ করে। সেখানে আমাদের দেশে দরিদ্র মানুষের করোনা টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণ অন্যায় ও অমানবিক সিদ্ধান্ত।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাসের সমালোচনা করে ২০ দলের সমন্বয়ক বলেন, জোটের নেতারা অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, এমন এক সংকটকালে ৫ লাখ কোটি টাকারও বেশি টাকার জাতীয় বাজেট পাস করা হয়েছে মাত্র একদিনের আলোচনায়।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার, রাজস্ব আয় আদায়, রফতানি ও আমদানি প্রবৃদ্ধি, রেমিটেন্স বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির হার ইত্যাদি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাল্পনিক পরিমাণ নির্ধারণ করে বাজেটের আয়-ব্যয়ের অংক মেলানো হয়েছে। যেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ধ্বংসপ্রায়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ অনিশ্চিত এবং কমতে বাধ্য। সরকার নিজেই রাষ্ট্রায়ত্ত পাট শিল্প বন্ধ করে ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য শিল্প বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
লাখো প্রবাসী যখন নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন, গণপরিবহন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ, গৃহ শ্রমিক, হকার্স, কুলি স্বনিয়োজিত কোটি কোটি শ্রমিক যখন কর্মহীন তখন সরকার তাদের জীবন রক্ষা ও জীবিকায় পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিয়ে বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির মতো রসিকতা করেছে। প্রবাসী শ্রমিক যারা ছুটিতে এসে আর্থিক সংকটে পড়েছেন তাদের প্রতিমাসে অন্তত ১৫ হাজার টাকা এবং যারা অনিবার্য কারণে ফিরতে বাধ্য হবেন তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের জোর দাবিও জানিয়েছে জোটটি। এছাড়াও অনিবার্য কারণে বেকার হয়ে পড়া এবং দিন আনে দিন খায় এমন দরিদ্র পরিবারগুলোকে যতদিন প্রয়োজন ততদিন রেশন কার্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের মাধ্যমে তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য জোটের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।