টানাগো সামি কাসদুল্লাহ দক্ষিণ মিসরের এক গ্রামে ২০ শতকের মাঝামাঝি জন্মগ্রহণ করেন। একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গির্জায় যাতায়াত করতেন। গির্জা আর খ্রিস্টধর্মের নানা গল্প শুনে বড় হন। পাশাপাশি মুসলমানদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও ইবাদত-বন্দেগি পর্যবেক্ষণ করেন। গির্জার আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগি মিলিয়ে দেখতেন। তিনি কোরআন ও বাইবেলের মিল-অমিল খুঁজে বেড়াতেন।
টানাগো সামি প্রতিদিন তাঁর মুসলিম ও খ্রিস্টান বন্ধুদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলে যাতায়াত করতেন। স্কুলে আসা-যাওয়ার সময়টা বন্ধুরা প্রায়ই নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে কথা বলত। কম বয়সী বালকরা যতটা বোঝে, সেই অনুযায়ীই তারা ধর্ম ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করত। এসব আলোচনা থেকে টানাগো সামির মনে বিশ্বাসের বিরোধ তৈরি হয়। তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকে। তিনি একটা পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবেন। এই ধারণা থেকে তিনি ধর্ম সম্পর্কে প্রচুর লেখাপড়া শুরু করেন। আল্লাহ ও সত্য সম্পর্কে আরো বেশি জানার প্রয়াস চালাতে থাকেন। শুরুতে তিনি মসজিদে মুসলমানদের নিয়মিত নামাজ পড়া এবং গির্জার প্রার্থনার মধ্যে ব্যবধান খোঁজার চেষ্টা করেন। তিনি দেখলেন খ্রিস্টানরা শুধু পুস্তক শ্রবণ করে, যা কপটিক ভাষায় পাঠ করা হয়। আর এই ভাষা কারো বোধগম্য নয়। আর এখানে পাদ্রির ভূমিকাই প্রধান। মানে মানুষ যা বলে তাকেই মুখ্য মনে করা হয়। কিন্তু ইসলাম এর চেয়ে ভিন্ন। খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে ইসলামের বড় ব্যবধান হলো ইসলামে ব্যক্তির ভূমিকা প্রধান নয়।
১৯৬৮ সালের কথা। টানাগো সামি কাসদুল্লাহর জীবনে এলো নতুন দিন। তিনি গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেন। টানাগো সামি কাসদুল্লাহ তাঁর নতুন নাম রাখেন আহমাদ সামি আবদুল্লাহ। তখন তাঁর বয়স ১৪ বছরেরও কম। ইসলাম গ্রহণ করার পর আহমাদ সামি কোরআন অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু তিনি তা গোপনে করছিলেন। তিনি ইসলামের কোনো কাজ প্রকাশ্যে করছিলেন না, যাতে তাঁর পরিবারের লোকেরা সেটি জেনে যেতে পারে। তিনি নামাজ ও রোজার মতো ইবাদতগুলোও সবার অজান্তেই পালন করতেন। পরিবারের লোকদের সন্দেহ দূর করার জন্য তিনি গির্জায়ও যাতায়াত করতেন!
১৯৮৪ সাল। আহমাদ সামি আবদুল্লাহর জীবনের অনন্য একটি দিন। সেদিন তিনি আল আজহার মসজিদে গিয়ে তাঁর ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। এরপর ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন সে কথা পরিবারের লোকদের কাছে খুলে বলেন। সামির ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে কট্টর খ্রিস্টান পরিবারের সদস্যরা বিস্মিত হলো। ফলে এর প্রতিক্রিয়াও হলো খুব তীব্র। পরিবারের লোকেরা আহমাদ সামি আবদুল্লাহর ইসলাম গ্রহণ মানতে পারেনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ভাইদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হলো। কিন্তু আহমাদ তাঁর বিশ্বাসে অনড় রইলেন। তবে আট মাস যেতে না যেতেই আহমাদ সামি আবদুল্লাহর জীবনে নেমে এলো এক ভয়ংকর দুর্যোগ। একদিন তিনি নিজের কাজে সাউহেইজ এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর ভাই তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
মহান আল্লাহ ইসলামের জন্য তাঁর ত্যাগ কবুল করুন।