সাময়িক বরখাস্ত উপ-সহকারী প্রোগ্রামার একেএম আনোয়ারুল ইসলাম আলিফের দাপটে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রশাসন তটস্থ হয়ে পড়েছে। জাল সনদে পদোন্নতি না পেয়ে ভয়ভীতি দেখানো থেকে শুরু করে আলিফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। তার বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। মতিহার থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পদোন্নতি পেতে কিছুদিন ধরে প্রশাসনের ওপর আলিফ অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে আসছিল।
জানা গেছে, সহিংসতা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে আলিফকে ৯ জুন সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রুয়েট প্রশাসন। পরের দিন রুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের কয়েকটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে আলিফের নেতৃত্বে সশস্ত্র গ্রুপ। এর আগে ৬ জুন আলিফ তার বাহিনী নিয়ে রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী তাপস সরকারের ওপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. সেলিম হোসেন বাদী হয়ে আলিফ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় এজাহার দায়ের করেন। তবে পুলিশ আলিফ বা তার সহযোগীদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আলিফের কয়েকটি শিক্ষা সনদ জাল এবং এগুলোতে গুরুতর অসঙ্গতি রয়েছে। এগুলো ধরা পড়ায় তার পদোন্নতি আটকে দেয়া হয়। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলিফ সশস্ত্র গ্রুপ নিয়ে রুয়েটকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ৭ মার্চ রুয়েটে ‘ডাটা প্রসেসর’ নামে তৃতীয় শ্রেণির পদে আলিফ যোগ দেন। ২০০১ সালের ভোকেশনালে মাধ্যমিক ও ২০১০ সালের চার বছর মেয়াদি কম্পিউটার ডিপ্লোমা সনদে চাকরি নেন। তার কর্ম অভিজ্ঞতার সনদ অনুযায়ী ২০০৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলিফ ঢাকার দুটি ও রাজবাড়ীর একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চাকরি করেন। ঢাকায় চাকরি করার পরও বগুড়া ইসলামী ব্যাংক ইন্সটিটিউট থেকে চার বছর মেয়াদি নিয়মিত কোর্সে কিভাবে অধ্যয়ন করেন রুয়েট প্রশাসনের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি আলিফ। অন্যদিকে আলিফের বিএসসি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ ও প্রশংসাপত্রেও ব্যাপক অসঙ্গতি এবং জালিয়াতি ধরা পড়েছে।
দারুল ইহসান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তার সনদে রুয়েট প্রশাসন অসঙ্গতি দেখতে পায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলিফের প্রশংসাপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে দারুল হাসান উল্লেখ রয়েছে। আলিফের প্রশংসাপত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের স্থলে ফ্যাকালটি অব ন্যাচারাল সাইন্স উল্লেখ রয়েছে। মূল সনদ ও প্রশংসাপত্রের তথ্যের বিস্তর গরমিল ধরা পড়ার পর থেকে সেসব ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেন আলিফ।
আলিফের এসব সনদ তার ব্যক্তিগত ফাইলে নথিভুক্ত করতে রুয়েটের অর্থ দফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ফয়সাল আরেফিন অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর আলিফ ক্ষিপ্ত হন। ফয়সাল আরেফিনের দফতরে ব্যাপক ভাংচুর চালান এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন আলিফ। তবে ২০১৫ সালে রুয়েটের তৎকালীন রেজিস্ট্রার তার বিতর্কিত এসব সনদ নথিভুক্ত করার সুপারিশ করেন। গত বছরের ২২ অক্টোবর রুয়েট কর্তৃপক্ষ সহকারী প্রোগ্রামার পদে বিজ্ঞপ্তি জারি করলে ওই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি পেতে আলিফ আবেদন করেন।
তার সনদের বিষয়ে তদন্ত ও অনুসন্ধান রুয়েট প্রশাসন অব্যাহত রাখায় এবং সহকারী প্রোগ্রামার পদে তার নিয়োগ অনিশ্চিত জেনে আলিফ সম্প্রতি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। প্রশাসনকে চাপে রাখতে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটায়।
অভিযোগ অস্বীকার করে একেএম আনোয়ারুল ইসলাম আলিফ বলেন, শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে হামলার ঘটনা সাজানো। তাকে ফাঁসাতেই একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এসব করেছে। তবে জাল সনদ নিয়ে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, সনদগুলো কিভাবে পেয়েছেন তা সামনাসামনি বুঝিয়ে বলতে হবে।
রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন বলেন, এসব বিষয় তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রুয়েট প্রশাসন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আলিফের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।