উৎসবের ঢেউ বোঝা গিয়েছিল চেলসি-ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচের আগেই। টুইটারে ভাসছিল নানা ছবি। সব ছবির রং এক—লাল, গাঢ় টকটকে লাল। যেন রক্তের দামে কেনা অপেক্ষার ফসল!
এই রূপকটুকু ব্যবহার করতেই হতো। রক্তক্ষরণ তো হচ্ছিলই। আশপাশের সবাই শিরোপা জেতে, এমনকি লেস্টার সিটির মতো পুঁচকে ক্লাবও রুপকথা লিখে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় সেখানে লিভারপুলের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের কপালে কীসের অভিশাপ?
একটি-দুটি বছর নয়, টানা ৩০ বছর ছিল লিগ না জয়ের আক্ষেপ। কাল চেলসির ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক সেই অপেক্ষা ঘোচানোর পর আনন্দের বাঁধ ভেঙে যাওয়াই স্বাভাবিক। এই অবস্থায় কোন সমর্থকের ঘরে বসে থাকতে মন চাইবে! লিভারপুল সমর্থকেরাও নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়। অ্যানফিল্ডে জমা হয় প্রচুর মানুষ। সবার উদ্দেশ্য একটাই, গত তিন দশকের অপেক্ষা, যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট, বেদনা উৎসবের আবিরে মুছে ফেলা। আর সেটি করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বালাই ছিল না লিভারপুল সমর্থকদের মধ্যে।
উৎসবের আলোর রঙ ছিল লাল। এ যেন লিভারপুলের ত্রিশ বছরের রক্তক্ষরণ থামানোর প্রতীকি রং।
উৎসবের আলোর রঙ ছিল লাল। এ যেন লিভারপুলের ত্রিশ বছরের রক্তক্ষরণ থামানোর প্রতীকি রং।
লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ জানতেন এমনকিছুই ঘটবে। তিন-চার গোলে হারের ম্যাচেও যে ক্লাবের সমর্থকেরা গান ধরেন ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’ এমন দিনে তাঁদের ঘরে রাখতে পারে কোন আইন, কোন ভাইরাস? ক্লপ তাই বাসায় থেকেই উৎসব করা কিংবা নিদেনপক্ষে সামাজিক দূরত্ব মেনে সব কিছু করার অনুরোধ করেছিলেন সমর্থকদের প্রতি। কিন্তু এমন কিছু সময় আসে যখন চাইলেও নিজেকে ধরে রাখা যায় না।
যেমন ধরুন, আজ থেকে ২০ বছর আগে বাংলাদেশে আজকের দিনটা। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার সেই দিনে নিজেকে ঘরে ধরে রাখতে পেরেছিলেন কোন সমর্থক! তেমনি লিভারপুল সমর্থকেরাও পারেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রেখেই বোঝা গিয়েছিল, অ্যানফিল্ডে জমা হচ্ছে হাজারো মানুষ।
বন্দর শহরটির রাস্তা-ঘাট থেকে পানশালায় মানুষে ভীড় তো ছিলই। তবে মূল উৎসবটা শুরু হয়েছে লিভারপুলের সূতিকাগার অ্যানফিল্ড থেকে। বাজি-পটকা ফুটিয়ে, আনন্দের আতিশায্যে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে হৃদয়ের দাবি মেটান ‘অল রেড’ সমর্থকেরা। এই তা তা থৈ থৈ আনন্দ-উৎসবে স্রেফ বিলীন হয়ে যায় ক্লপের অনুরোধ।
হবেই তো! সত্যি বলতে হৃদয়ের দাবি এমন এক অনুভূতি যাঁর সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন। মেরিলিন নেসবিটের পরিবারের কথাই ধরুন। চেলসি-সিটি ম্যাচ যেখানে হচ্ছিল তার পাশের জায়গা স্ট্যানলি পার্কে পরিবারের সঙ্গে উৎসব করছিলেন তিনি। কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণে এখনো ভালোই ভুগছে ইংল্যান্ড। কিন্তু এ নিয়ে নেসবিটের কোনো বিকার নেই, ‘এটা অবিশ্বাস্য। আমরা ৩০ বছর অপেক্ষা করেছি।’
অ্যানফিল্ডের সামনে অগনিত সমর্থক।
অ্যানফিল্ডের সামনে অগনিত সমর্থক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা গেছে হোটেলে, পানশালায় জড়ো হয়ে চেলসি-সিটি ম্যাচটা দেখেছেন তারা। চেলসি জেতায় (২-১) শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় লিভারপুলের। এরপরই উৎসবে মেতে ওঠেন লিভারপুল খেলোয়াড়েরা। বিটি স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলার আগে সতীর্থদের জড়িয়ে ধরেন তারকা ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক। রবার্তো ফিরমিনো, আলিসন বেকার, অ্যান্ড্রু রবার্টসনরা ছিলেন এ সময়।
রবার্টসন যেমন সত্য কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললেন, ‘কোন হোটেলে আছি তা বলা যাবে না। তবে সবাই একসঙ্গে খেলা দেখেছি। কেভিন ডি ব্রুইনা বিশ্ব ধ্বংস করে দেওয়া গোলটি করার পর সবাই চুপসে গিয়েছিল। ভাগ্য ভালো চেলসি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এরপরই সবাই মোটামুটি আনন্দে পাগল হয়ে যায়।’
সে তো হওয়ারই কথা। ত্রিশ বছর অপেক্ষার পর ওরা কথা রেখেছে। সমর্থকেরা স্বাভাবিক থাকেন কীভাবে, কেন-ই বা থাকবে!লিভারপুলের রাস্তায় এমন ভিড় জমিয়েছিলেন সমর্থকেরা।
লিভারপুলের রাস্তায় এমন ভিড় জমিয়েছিলেন সমর্থকেরা।