করোনা পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের আর্থিক দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন মহল থেকে টিউশন ফি কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাতে সাড়া দেয়নি অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। বরং টিউশন ফি আদায়ের জন্য দফায় দফায় নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। যথাসময়ে টিউশন ফি না দিলে ভর্তি বাতিলেরও হুমকি দিয়েছে কয়েকটি স্কুল। এ পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা বিষয়টির সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন।
অভিভাবক ও বিভিন্ন মহলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরই মধ্যে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ৫০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবকের কর্মসংস্থান বন্ধ রয়েছে। এতে তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। বিষয়টি বিবেচনা করে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অভিভাবক ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে দেশের সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসের টিউশন ফি ৫০ শতাংশ মওকুফের আবেদন জানানো হয়। মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড স্কুলসহ হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল টিউশন ফি কমিয়েছে। বাকিরা সাড়া দেয়নি।
জানা গেছে, রাজধানীর সানিডেল স্কুলের টিউশন ফি আদায়ের জন্য অভিভাবকদের কাছে নিয়মিত নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। টিউশন ফি না দিলে ভর্তি বাতিলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। একাধিক অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পূর্ণ মাসিক বেতন আদায় একটি অমানবিক কাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে চুক্তি রয়েছে সেই চুক্তির পরিপন্থি। কেননা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের অঙ্গীকারবদ্ধ সেবা প্রদান না করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন নিতে পারেন না।
এদিকে ফি মওকুফের দাবি তোলায় বিভিন্ন স্কুলের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো স্কুল অনলাইন ক্লাস শুরু করলেও অনেক শিক্ষার্থী সেই লিঙ্ক পাচ্ছে না। টিউশন ফি না দিলে রেজাল্ট প্রকাশ না করাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে অভিভাবকদের। ইমেইল পাঠিয়ে সন্তানকে ছাড়পত্র দেওয়া ও মানববন্ধন করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে। এসব ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের একটি আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ উভয়কে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যেহেতু শিক্ষকদের বেতনভাতা দিতে হবে, তাই টিউশন ফি দেওয়া অভিভাবকরা যেন একেবারে বন্ধ করে না দেন। আর স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এই মুহূর্তে লাভের দিকে না তাকিয়ে টিউশন ফি কমিয়ে শিক্ষকদের বেতনভাতার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুতে নামিয়ে আনা। যেহেতু শিক্ষার্থীরা সব নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে।
এর আগে অভিভাবকদের পক্ষে টিউশন ফি কমানোর দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ন কবির পল্লব । তিনি আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন, সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে এনে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের শিক্ষা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাত্ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। এমতাবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক টিউশন ফি আদায় করতে পারে কি না এমন প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোথাও কোথাও মাসিক বেতন মওকুফ করেছে এবং কেউ কেউ আংশিক মওকুফ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় করছে। আদায় করতে না পারলে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে তাদের আগামী পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না কিংবা স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে।