মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১০:৩৩ অপরাহ্ন

স্বাস্থ্যবিধি মানুন করোনামুক্ত থাকুন

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০
  • ৫২ জন নিউজটি পড়েছেন

জীবনের সুরক্ষা আপনার নিজের হাতেই

* অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ্

প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ও কিছু যৌক্তিক কারণে বর্তমানে করোনাভাইরাস নির্ণয়ে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক টেস্ট করা না হলেও Rapid test kit চলে এলে এটি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আক্রান্তের সংখ্যা তিন-চার হাজারের মধ্যে থাকলে আশা করা যায়, চলতি মাসের শেষ দিকে এ সংখ্যা কমা শুরু হবে।

করোনার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। ফ্লু বা যে কোনো ভাইরাল ইনফেকশনের লক্ষণের মতো যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা। তবে রোগী যখন কোনো ঘ্রাণ বা খাবারে স্বাদ না পান, কারো পাতলা পায়খানা থাকলে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু কোভিড রোগীর সংখ্যা এখন ব্যাপক তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে করোনার কথা মাথায় রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে বা নিকটস্থ স্যাম্পল সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে তাকে করোনার টেস্ট করাতে হবে। যেহেতু হাসপাতালে বেড, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সংকট তাই লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির আগে বলা হতো শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। করোনা এখন প্রায় সব বয়সেই হচ্ছে তাই বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হবে, পরিবারের সদস্যদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের ওপর জোর দিতে হবে।

আক্রান্ত রোগীসহ বাসার সবাইকে পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, ফলমূল ও তাজা শাকসবজি গ্রহণ করতে হবে। শিশুদের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আশা করা যায়, চলতি বছরেই করোনার প্রতিষেধক টিকা পাওয়া যাবে তবে ব্যক্তিগতভাবে রোগ প্রতিরোধের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বাসায় থেকে হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অভ্যাস করুন। ধূমপান পরিহার করুন। সকালের রোদে ১০-১৫ মিনিট থাকলে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

ভীতসন্ত্রস্ত হবেন না, মনোবল হারাবেন না, আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন। করোনা পজিটিভ রোগীকে একটি ঘরে আইসোলেটেড রেখে অন্য ঘর থেকে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী জিংক ট্যাবলেট, ভিটামিন-সি চালিয়ে যেতে হবে। এভাবে চললে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘরে বসেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। ঘরে অবস্থান করুন, কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। বাসার বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন ও মাস্কের সঠিক ব্যবহার জানুন, ভিড় বা গণসমাবেশ, গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন ও বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য যার যার ধর্মীয় চর্চা চালিয়ে যেতে পারেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সচেতনভাবে চলা আপনার নাগরিক দায়িত্ব। নিজের জীবনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আপনার নিজের কাছেই।

লেখক : ইউজিসি অধ্যাপক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, একুশে পদকপ্রাপ্ত, সাবেক চেয়ারম্যান ও ডিন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

ডেন্টাল চিকিৎসায় কার্যকর গাইড লাইন তৈরি হচ্ছে

* ডা. মো. রকিবুল হসেন রুমী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইঙ্গিত দিচ্ছে, দীর্ঘ সময় রয়ে যাবে করোনার তাণ্ডব। গত ছয় মাসে জন্ম নেয়া এ ভাইরাসের সংক্রমণকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করে ডেন্টাল চিকিৎসা প্রদানের প্রস্তুতি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। সে কারণে অন্যসব পেশার তুলনায় ডেন্টিস্ট্রিকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রোগীদের জন্য আশ্বস্তের খবর হচ্ছে, ডেন্টাল ক্লিনিকের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিরাপদ ও কার্যকর গাইড লাইন তৈরি হচ্ছে।

বাসা থেকে বের হলে ডেন্টাল রোগীদের করোনাসংক্রমিত হওয়ার আশংকা বেশি, তেমনি রোগী যদি ভাইরাস বহনকারী হয় তো তার কাছ থেকে অন্য যে কেউ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়ে যায়- বিষয়টি বিবেচনা করে ডেন্টাল রোগীদের ঘরে থেকে বিনামূল্যে টেলিপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন দেশের প্রায় সব অনুমোদিত চিকিৎসক।

মহামারীর এ সময় যেন চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে না হয় সেজন্য মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা জরুরি।

* নিয়মিত ও নিয়ম মেনে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার

* কাঠি বা ধাতব কিছুর পরিবর্তে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহারে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার

* মাড়ি মেসেজ ও চিকিৎসকের পরামর্শে জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ ব্যবহার

* মিষ্টিজাতীয় খাবারের পরিবর্তে দাঁতের স্বাস্থ্যবান্ধব খাবারে উৎসাহী হওয়া

* দুর্বল, ক্যাপবিহীন রুট ক্যানেল বা বড় ফিলিং করা। দাঁতে শক্ত কিছু না চিবানো

* দাঁতে গর্ত থাকলে খাবার পর জোরে কুলি করে গর্ত পরিষ্কার রাখা

* অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, কিডনি রোগ, এসিডিটি প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কারণ শরীরের অনান্য রোগের মাত্রা বেড়ে গেলে মুখে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে

* পর্যাপ্ত তরল পান

* ধূমপান বা জর্দা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

লেখক : আহ্বায়ক, বিএফডিএস, চেয়ারম্যান, গ.ব., পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ

করোনা হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়

* অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান

বিশ্বে শতকরা প্রায় ২০-২৫ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অন্যদিকে বাংলাদেশে শতকরা ৮ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিক রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউ এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারে চিকিৎসা নিলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিক রোগীকে এ পরিস্থিতিতে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এক. যারা করোনা আক্রান্ত নন তারা অতিপ্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হবেন না। কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলুন ও নির্ভরযোগ্য সূত্র বা সরকারি করোনারোধক দিকনির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে পালন করতে হবে, সুগার লেভেল কন্ট্রোলে রাখুন।

নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে থাকুন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রোটিন, ভিটামিনযুক্ত খাবার খাবেন সঙ্গে ঘরেই হাঁটাহাঁটি করুন।

দুই. করোনা আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব রাখুন, মাস্ক পরিধান করে থাকবেন। নিজের পরিধেয় কাপড়, বাসন, গ্লাস আলাদা রাখুন। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য শর্করা খাবারের সঙ্গে প্রোটিন, ফলমূল বেশি করে খাবেন যা ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, জিঙ্ক, ভিটামিন-এ-এর চাহিদা পূরণ করবে। শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে এক স্থানে বেশি সময় শুয়ে-বসে থাকবেন না।

আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অল্প উপসর্গ থাকলে টেলিমেডিসিনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ চালিয়ে যান এবং নিয়মিত সুগার লেভেল পরিমাপ করুন। মধ্যম আক্রান্ত রোগী যাদের কো-মরবিডিটি আছে, সঙ্গে কাশি নিউমোনিয়া আছে, শ্বাসকষ্ট নেই কিন্তু অনিয়মিত সুগার লেভেল তারা হাসপাতালে ভর্তি হবেন। তীব্র উপসর্গ থাকলে যত দ্রুত সম্ভব কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসক সাবকিউটেনিয়াস অথবা আইভি ইনসুলিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করবেন। পানিস্বল্পতা না থাকলে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে ইনসুলিন নিরাপদ।

যারা করোনা আক্রান্ত কিন্তু ডায়াবেটিস নেই তাদের এখন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই সুগার লেভেল নিয়মিত মাপুন, অসতর্কতা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।

লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

প্রাইভেট চিকিৎসকদের জন্য প্রণোদনা জরুরি

* মো. জামিউল হোসেন জামির

এ সময়ে অতি প্রয়োজনে মানুষকে বাইরে বের হতে হয়, এর মধ্যে প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হচ্ছে শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। দেশের তেরো হাজারের মতো ডেন্টাল চিকিৎসক অসহনীয় দাঁতের ব্যথা বা ডেন্টালের যে কোনো রোগ নিয়ে অগণিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে। জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে ইতোমধ্যে একাধিক ডেন্টাল চিকিৎসক কোভিভ-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন ও মৃত্যুবরণ করেছেন।

মোট চিকিৎসকদের সিংহভাগ প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ওপর নির্ভরশীল আবার সেখান থেকে একটি বড় অংশ নবীন চিকিৎসক। করোনারোধে বৃহৎ স্বার্থে ডেন্টাল রোগীদের ঘরে বসে চিকিৎসা নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান থাকলে নবীন চিকিৎসকসহ অনেককে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হতে পারে।

বর্তমানে নীতি-নির্ধারক পর্যায় থেকে অন্যান্য অতি জরুরি সেবাদানকারী পেশা যেমন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীর পাশাপাশি ডেন্টাল চিকিৎসকদের প্রতি উৎসাহের সঙ্গে পাশে থাকার বিষয়টিকে নিশ্চিত করা জরুরি। প্রাইভেট চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা এখন সময়ের দাবি। তা বাস্তবায়িত না হলে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান হুমকির মুখে পড়বে। সরকারি পর্যায় থেকে নতুন চিকিৎসক নিয়োগেও ডেন্টাল চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি।

লেখক : প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বিএফডিএস, চেয়ারম্যান, সাফেনা উইমেন্স ডেন্টাল কলেজ, পরিচালক, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ

করোনাকালে সন্তান গ্রহণ না করাই শ্রেয়

* অধ্যাপক ডা. মালিহা রশিদ

বিশ্বজুড়ে করোনা প্রতিরোধ-প্রতিকার আর নিরাময়ের চেষ্টায় চিকিৎসক সম্প্রদায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। জীব সম্প্র্রদায়ের মতো প্রেগন্যান্সি বা গর্ভাবস্থা মানবসমাজের জন্য সাধারণ অবস্থা। এর বিশেষত্ব হল মায়েদের স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন। গর্ভাবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হলে অন্য করোনা রোগীর তুলনায় গর্ভকালীন ঝুঁকি বেড়ে যায় না কিন্তু মায়ের যদি অন্য রোগ থাকে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ স্থুলকায়, হার্ট ডিজিজ ইত্যাদি তবে ঝুঁকি বাড়তে পারে।

আমরা সবাই করোনার উপসর্গ জেনে গেছি যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, নাকে খাবারের ঘ্রাণ না পাওয়া আর এর সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট থাকে তবে আমরা এটিকে জটিল অবস্থা ধরে নেই। এখন পর্যন্ত করোনার সঙ্গে গর্ভপাতের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মা থেকে গর্ভের বাচ্চায় এ রোগের বিস্তার ঘটতে দেখা গেছে।

এ রোগ সম্পর্কে আমাদের ধারণা কম, চিকিৎসাও অজানা তাই প্রতিকারই উত্তম। অতি জরুরি ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া এবং প্রয়োজনে বাড়িতে থেকে টেলিফোনে বা অনলাইনে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সাধারণত গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহের পরে ঝুঁকি বেড়ে যায় কাজেই এ সময় সাবধানে থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে, সুষম খাবার, পরিমিত ব্যায়াম, ভিটামিন-ডি, ফলিক এসিডে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দুঃশ্চিন্তা রোগের প্রকোপ বাড়ায় কাজেই চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। এ সময়ে নতুন করে সন্তান গ্রহণ না করাই সমুচিত। একবার করোনার আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কনসালটেন্ট, সেন্ট্রাল হসপিটাল, ঢাকা

করোনার ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না

* ডা. মুহাম্মদ মুরতাজা খায়ের

কোভিড রোগীর সিম্পটম শুরু হলে অনেকেই কোভিড টেস্ট (কোভিড-১৯ RT-PCR)-এর রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করেন। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না করে HRCT scan-এর রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করা আবশ্যক। কোভিড হলে ফুসফুসে এ সংক্রমণ হয় সর্বাপেক্ষা বেশি, কাজেই যারা Asthma ও COPD রোগে ভুগছেন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ধূমপান ত্যাগ করা এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করা। এ রোগীদের কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে তার ধরন যদি অস্বাভাবিক মনে হয় তবে অতিশিগগির চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছুই গ্রহণ করা উচিত নয়। কাশি বা সর্দি হলেই মানুষ Antihistamine নিচ্ছেন।

কোভিড হলে কফ এমনিতেই ঘন হয়, তাই Antihistamine নিয়ে সেটিকে আরও ঘন করে দেয়, যা রোগীর জন্য কষ্টদায়ক। এক্ষেত্রে কফ নিঃসারক জাতীয় ওষুধ খেলে আরাম পাওয়া যাবে। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে দু’গ্রুপের ওষুধ recommend করা হয়। যদি Oxygen Saturation ৯৫%-এর উপরে থাকে তাহলে Favipiravir গ্রুপের ওষুধ সঙ্গে Anti-coagulant গ্রুপের ওষুধ দেয়া হয়। যদি Oxygen Saturation ৯৩%-এর কম হয় তাহলে Remdesivir গ্রুপের ওষুধ সঙ্গে Anti-coagulant, প্লাজমা থেরাপি, Tocilizumab, Steroid এবং High Nasal Flow Oxygen দেয়া হয়। এসব ওষুধ কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ বা তত্ত্বাবধায়ন ছাড়া নেয়া উচিত নয়, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে রাখতে এবং প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর ফুসফুসের ব্যয়াম করাতে হয়। কোভিড নেগেটিভ হয়ে যাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে Covid Fibrosis হয় (রোগীর Oxygen লেভেল বজায় থাকে না), সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, অন্যথায় ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে (Lung Fibrosis)। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর প্রতি বছর ফ্লু ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক) এবং প্রতি ৫ বছর অন্তর Pneumonia ভ্যাকসিন নিতে হবে।

লেখক : কনসালট্যান্ট, জাতীয় অ্যাজমা সেন্টার ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা

মুখের মধ্যেই করোনাভাইরাসের অবাধ বিচরণ

* ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ

এ সময়ে ডেন্টাল চিকিৎসকরা অন্যতম ঝুঁকিতে আছেন। কারণ মুখের অভ্যন্তরে যে কোনো চিকিৎসা দিতে গেলে রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যকার স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় ফলে রোগী, চিকিৎসক, সহকারীসহ চেম্বারের সবাই কম-বেশি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

এ ভাইরাসের পছন্দের স্থান উপরের শ্বাসতন্ত্র তাই মুখের মধ্যেই এদের অবাধ বিচরণ। ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রায় সব পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত বাতাস ও পানির প্রয়োজন পড়ে যা মুখের মধ্যকার সম্ভাব্য ভাইরাসের সঙ্গে মিশে এরোসল বা অতিক্ষুদ্র অদেখা জলকণা তৈরি করে যেটি চেম্বারের মধ্যে অতিবেগে ঘুরতে পারে।

বেশিরভাগ দাঁত বা মুখের রোগ কেবল ওষুধে নিরাময়যোগ্য নয়। অনেক ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি অবস্থা তৈরি হয়। যেমন- অসহনীয় ব্যথা, সংক্রমণ ছড়িয়ে মুখ ফুলে যাওয়া, দুর্ঘটনায় দাঁত বা চোয়ালের হাড় ভেঙে যাওয়া, আক্কেল দাঁতের প্রদাহ, অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত ইত্যাদিতে চিকিৎসাকেন্দ্রে আসার প্রয়োজন পড়ে।

উন্নত বিশ্ব ও দেশীয় নানা দিক-নির্দেশনায় ক্লিনিকগুলো সংক্রমণ রোধের নানা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেয়া শুরু করলেও রোগীদের ইতিবাচক সহযোগিতা এখানে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ডেন্টাল রোগীদের প্রথমেই তার আস্থাভাজন চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে আলাপ করতে হবে, মূল ডেন্টাল কষ্টের পাশাপাশি তার কোনো করোনা উপসর্গ যেমন- জ্বর, কাঁশি, সর্দি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, পাতলা পায়খানা, গন্ধ ও স্বাদ অস্বাভাবিক, বমি ভাব, চোখ লাল হওয়া, পা বা শরীরে ৎধংয অথবা যে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে বা ছিল কিনা তা বলতে হবে। শুধু তাই নয়- পেশাগত কাজে বা দৈনন্দিন কাজে তার কতটা করোনা ঝুঁকি রয়েছে সেটিও উল্লেখ করতে হবে। এখন অসংখ্য করোনা বহনকারী অনেকটা উপসর্গহীন তাই কোভিড রোধে এমন ইতিহাস নির্ভুলভাবে জানান জরুরি।

চিকিৎসক রোগের ধরন বুঝে আপনাকে পরামর্শ দেবে, একান্ত জরুরি না হলে ওষুধের মাধ্যমে রোগটা নিয়ন্ত্রণের সাময়িক চেষ্টা করা হবে। জরুরি মনে করলে বিশেষ কিছু দিক-নির্দেশনা বলবেন যেটি আপসহীনভাবে মেনে চেম্বারে আসতে হবে। যেমন- বাসা থেকে সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে ও বাজারজাত পভিডন আয়োডিন মাউথওয়াশ বা উষ্ণ পানিতে লবণ মিশিয়ে ২০ সেকেন্ড গলায় গার্গেল ও ৩০ সেকেন্ড কুলি করে পরিষ্কার পোশাক ও নতুন মাস্ক পরিধান করে, হ্যান্ড গ্লাভস পরে, সরকারি স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ মেনে যতদূর সম্ভব সহজে খোলাযোগ্য জুতা পরে, চিকিৎসার ধরন বুঝে সঙ্গে কাউকে না নিয়ে (নিলেও সে ক্লিনিকের বাইরে অবস্থান করবে) গণপরিবহন এড়িয়ে গগল্স ব্যবহার করে চেম্বারে আসতে হবে। চেম্বারে প্রবেশের পর কর্র্তৃপক্ষ কর্তৃক দেয়া গাইডলাইন মানতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মাস্ক খুলে কোনো কথা বলা যাবে না ও গ্লাভস খুলে হাত জীবাণুমুক্ত না করে কোথাও স্পর্শ করা যাবে না।

রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের সচেতনতার মাধ্যমে ক্লিনিক থেকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ অনেকটাই সম্ভব।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © vira-l.com 2017-2022
themesba-lates1749691102
Bengali English