বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। শীতকালকে নানাজনে নানাভাবে গ্রহণ করলেও মোমিনের জন্য এটি বড় নিয়ামত। কেননা, এ সময়ে রাত লম্বা এবং দিন ছোট হয়। ফলে কিয়ামুল লাইল তথা রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া এবং দিনে রোজা রাখা সহজসাধ্য। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মকালে দিন লম্বা এবং রাত ছোট হওয়ায় দিনে রোজা রাখা এবং রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা কষ্টকর। এই জন্য শীতকালকে ইবাদতের বসন্ত আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবু সাইদ খুদরি রা: নবীজী সা: থেকে বর্ণনা করেন, ‘শীতকাল মোমিনের বসন্ত’। (মুসনাদে আহমদ) অর্থাৎ শীতকাল আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম। সালফে সালেহিন তথা পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল ব্যক্তিরা শীতকালকে গণিমত হিসেবে গ্রহণ করতেন।
হজরত আবু হুরায়রা রা: বলতেন, ‘আমি কি শীতল গণিমতের কথা জানাব না? তা হচ্ছেÑ শীতকালে দিনে রোজা রাখা এবং রাতে নামাজ আদায় করা।’ হজরত ইবনে মাসউদ রা: বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা, তা বরকত বয়ে আনে। শীতের রাত দীর্ঘ হয়, যা কিয়ামুল লাইলের সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে সহজ।’ বিশিষ্ট তাবেয়ি হাসান বসরি রহ: বলেন, ‘শীতকাল মোমিনের জন্য কত না উত্তম! কেননা, শীতের রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া এবং দিনের বেলা রোজা রাখা সহজ-সাধ্য ব্যাপার।’ শীতকাল এলে হজরত উবাইদ ইবনে উমায়ের রহ: বলতেন, হে আহলে কুরআন! রাত লম্বা হয়েছে, তাতে কুরআন তিলাওয়াত করো এবং দিন ছোট হয়েছে তাতে রোজা রাখো। ইয়াহইয়া ইবনে মুয়াজ রহ: বলতেন, শীতের রাত দীর্ঘ। ঘুমিয়ে তাকে খাটো করো না এবং ইসলাম পবিত্র-পরিচ্ছন্ন, গোনাহর দ্বারা তাকে কলুষিত করো না। পূর্বসূরি বুজুুর্গদের অনুকরণে আমরাও শীতকালকে ইবাদতের মৌসুম হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক বাড়ানোর মোক্ষম এ সময়টাকে কাজে লাগাতে পারি। রাতে তাহাজ্জুদের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কেননা, সব নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে, সে কতই না উত্তম’ (বুখারি শরিফ : ১১২২)! তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘তাহাজ্জুদ পড়াকে তোমরা নিজেদের ওপর আবশ্যক করে নাও। কেননা, এটি পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলদের রীতি ছিল। এ নামাজ তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য স্থাপনকারী, গোনাহ মোচনকারী এবং অন্যায় থেকে বিরত রাখে’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৭৭)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তায়ালা হাসেন, অর্থাৎ খুশি প্রকাশ করেন। তারা হলোÑ ১. যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে ওঠে উত্তমরূপে অজু করে ও নামাজ পড়ে; ২. যে ব্যক্তি সেজদায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে; ৩. যে ব্যক্তি পরাস্ত সেনাবাহিনীর ভেতরে দ্রুতগামী অশ্বে আরোহিত থেকেও পলায়ন করে না’ (সহিহ ইবনে হিব্বান)।
শীতকাল মোমিনের বসন্ত হওয়া সত্ত্বেও বহু মানুষ এ সময়ে ইবাদত-বন্দেগি থেকে বিরত থাকে। অলসতার চাদর মুড়ি দিয়ে রাত কাটিয়ে দেয়। এমনকি এশা ও ফজরের নামাজ আদায়েও উদাসীনতা প্রদর্শন করে। শীতের রাতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে অজু করতে কষ্ট হয় বিধায় নামাজ আদায়ে অলসতা পেয়ে বসে। কিন্তু জানা দরকার, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিপূর্ণরূপে অজু করা সর্বোৎকৃষ্ট আমল। হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আমি কি এমন আমলের কথা জানাব না! যার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের পাপগুলো মার্জনা করে দেবেন এবং আখিরাতে তোমাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’ সাহাবারা আরজ করেন, অবশ্যই বলুন। তিনি তখন বললেন, কষ্টের সময় পূর্ণরূপে অজু করা, মসজিদে বেশি বেশি গমন করা এবং এক নামাজ আদায়ের পর পরবর্তী নামাজের অপেক্ষায় থাকা (বুখারি ও মুসলিম)।
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: বর্ণনা করেন, একদা নবীজী সা: ফজরের নামাজ পড়ে সাহাবাদেরকে বলেন, ‘গত রাতে নামাজের মধ্যে আমার তন্দ্রা চলে এলো। এমতাবস্থায় আমি আল্লাহ পাকের দিদার লাভ করি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে মুহাম্মদ! ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কী বিষয়ে আলোচনা করছে? তিনবার জিজ্ঞাসার পর তাঁর ইচ্ছায় আমার কাছে সবকিছু উন্মোচিত হলো। তখন আমি বললাম, ঊর্র্ধ্বজগতের ফেরেশতার আলোচনা করছেÑ ‘কোন আমল দ্বারা বান্দার পাপরাশি মোচন হয় এবং কোন আমল দ্বারা জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ যে আমল দ্বারা পাপ মোচন হয় তা হচ্ছেÑ জামাতে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে গমন করা, এক নামাজ আদায় করে পরবর্তী নামাজের অপেক্ষায় থাকা এবং কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অজু করা। আর যে আমল দ্বারা জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তা হচ্ছেÑ মানুষকে খানা খাওয়ানো, মানুষের সাথে নম্রভাবে কথা বলা এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ আদায় করা’ (মিশকাত শরিফ)।